শহীদ বুদ্ধিজীবী
এ এইচ এম নূরুল আলম
শহীদ বুদ্ধিজীবী, শ্রীনগর, মুন্সিগঞ্জ
শিকারের দারুণ শখ ছিল এ এইচ এম নূরুল আলমের। হাতের নিশানাও ছিল অব্যর্থ। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে বন্দুক কিনেছিলেন। কাজের সুবাদে ছিলেন খুলনায়। সুযোগ পেলেই বন্দুক হাতে চলে যেতেন সুন্দরবনে। যে বন্দুক দিয়ে তিনি শিকার করতেন, সেই বন্দুক উঁচিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে।
নূরুল আলম অবশ্য জানতেন তাঁর বন্দুকটি হানাদের সৈনিকদের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের তুলনায় কিছুই নয়, তবু মোটেই ভীত হননি তিনি। পিটটান দেননি। বীরের মতো লড়াই করে শহীদ হন খুলনা নিউজপ্রিন্ট কারখানার এই কর্মকর্তা।
ঘটনাটি মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শুরুতে। ভারী অস্ত্রসজ্জিত একদল পাকিস্তানি সৈনিক একাত্তরের ২৬ মার্চ সকালে হামলা চালায় খুলনা নিউজপ্রিন্ট কারখানায়। তাদের প্রবেশে বাধা দিতে কারখানার ভেতরের ফটক বন্ধ করা হয়েছিল। আর পাকিস্তানি বাহিনী ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। সেদিনের স্মৃতিচারণা করে নূরুল আলমের স্ত্রী রাশেদা আলম লিখেছেন, ‘আলম নিজের ঘরসংসার উপেক্ষা করে হাতে বন্দুক ও দুই পকেটে গুলি নিয়ে ঘরের বাইরে চলে যান। তাঁর আদরের একমাত্র ছেলে রিন্টু তখন তাঁর পিছে যেতে যেতে বলে “আব্বু আমি শিকারে যাব।” রিন্টু ভেবেছিল ওর আব্বু শিকারে যাচ্ছে।’ রশীদ হায়দার সম্পাদিত বাংলা একাডেমির স্মৃতি: ১৯৭১ গ্রন্থের পুনর্বিন্যাসকৃত দ্বিতীয় খণ্ডে এই স্মৃতিকথায় রাশেদা আলম জানিয়েছেন, ঘর থেকে বেরিয়ে নূরুল আলম কারখানায় যাঁদের কাছে বন্দুক ছিল তাঁদের নিয়ে ২৬ জনের একটি দল তৈরি করেন। তাঁরা বিভিন্ন ভবনে অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করেন। ৭–৮ জন হানাদার সৈনিককে ঘায়েলও করেন। একপর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদারদের প্রবল গুলিবর্ষণের সামনে টিকতে না পেরে কেউ কেউ ফিরে গেলেও নূরুল আলম ফেরেননি।
হানাদার সেনারা কারখানার ভেতরে প্রবেশের পর অবাঙালিরা নূরুল আলমের অবস্থান জানিয়ে দেয়। বর্বর সেনারা সেই দোতলা বাড়িটি ঘিরে ফেলে। তারা নূরুল আলমকে ধরে ফেলে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। এরপর হানাদারেরা মিলের ভেতরে নির্বিচারে হত্যা নির্যাতন চালাতে থাকে। এক প্রতিবেশীর সহযোগিতায় দুই মেয়ে রুনা, মুনা ও ছেলে রিন্টুকে নিয়ে সন্তানসম্ভবা রাশেদা আলম কারখানা থেকে পালিয়ে যান।
নূরুল আলমের জন্ম মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায়। তাঁর শিক্ষাজীবন কেটেছে ঢাকায়। খুলনা নিউজপ্রিন্ট কারখানায় কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৫৬ সালে। কারখানাটিকে তিনি খুবই ভালোবাসতেন। সেই প্রিয় কারখানাতেই শহীদ নূরুল আলমের অন্তিম শয্যাও পাতা হয়েছে।
গ্রন্থনা: আশীষ-উর-রহমান
Also Read
-
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যেতে ট্রাম্পের সই
-
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল, শুল্ক বৃদ্ধিসহ কী কী চমক দিচ্ছেন ট্রাম্প
-
ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় গ্রেপ্তার ১৫০০ জনকে মুক্তি দিতে ট্রাম্পের সই
-
ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ইসরায়েলের ঘোর সমর্থক মার্কো রুবিওর নিয়োগ চূড়ান্ত
-
‘আমি কি সত্যিই মাঠে ওসব করেছি’—নিজেরই বিশ্বাস হয় না কনস্টাসের