শহীদ বুদ্ধিজীবী
ছমির উদ্দিন মণ্ডল
শহীদ বুদ্ধিজীবী, সমাজকর্মী, জয়পুরহাট
দিনটি ছিল একাত্তরের ৯ মে। ছমির উদ্দিন মণ্ডল কয়েকজন সহযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু রাজাকাররা আগেই তা টের পেয়ে যায়। জয়পুরহাট থানার ভাদশা গ্রামে পৌঁছালে রাজাকাররা ছমির উদ্দিন মণ্ডল ও তাঁর সহযোদ্ধাদের ধরে ফেলে। তুলে দেয় পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের হাতে। নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল তাঁদের।
জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর পৌর এলাকার মানিকপাড়া মহল্লার এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্ম ছমির উদ্দিন মণ্ডলের, ১৯৩৩ সালের ১২ আগস্ট। এলাকায় বহু জনহিতকর কাজ করেছেন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন তিনি। ছমির উদ্দিন ১৯৪৮ সালে আক্কেলপুরের সোনামুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৫০ সালে বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ডিগ্রি নেন। এরপর তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ভাষা আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি বগুড়া শাখার কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৫২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া আক্কেলপুরে বাজারে কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার জন্য আন্দোলন করে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।
আক্কেলপুর বালিকা বিদ্যালয় ও আক্কেলপুর মুজিবুর রহমান কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ছমির উদ্দিন মণ্ডল। জয়পুরহাট কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য তহবিল সংগ্রহে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এ ছাড়া তিনি জয়পুরহাট চিনিকলকেন্দ্রিক আখচাষি সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এবং আক্কেলপুর আদর্শ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
বাংলা একাডেমির শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ গ্রন্থে শহীদ ছমির উদ্দিন মণ্ডলের পরিচিতি রয়েছে নিষ্ঠাবান সমাজকর্মী হিসেবে। এলাকার মানুষের বিপদে-আপদে সব সময় পাশে থেকেছেন। একাত্তরে তিনি তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ভারতে যাওয়ার উদ্যোগ নেন।
শহীদ ছমির উদ্দিন মণ্ডলের ছোট ছেলে হো-চি-মিন প্রথম আলোকে বলেন, পিস কমিটির সেক্রেটারি মতিউর রহমান ও আক্কেলপুরের স্থানীয় রাজাকাররা ৯ মে তাঁর বাবা ও তাঁর সহযোদ্ধাদের ধরে ফেলে। তাঁদের আক্কেলপুর রেলওয়ে স্টেশনের একটি ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। এর দুই দিন পর ১৩ মে তারা ছমির উদ্দিন মণ্ডল, আবুল মাঝি, আবদুল মেম্বারসহ তাঁর সহযোদ্ধাদের পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেয়। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের একটি জিপ গাড়িতে তুলে নেয়। নওগাঁ সদর থানার কির্ত্তীপুর এলাকার কোনো এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে তাঁদের হত্যা করা হয় বলে পরে তাঁরা জানতে পেরেছেন। তবে বাবার লাশ তাঁরা পাননি।
ছমির উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে জানান, তাঁর মা হাজেরা বেগম ২০০৬ সালে ইন্তেকাল করেছেন। তাঁরা পাঁচ ভাইবোন, বোন দুজনও ইন্তেকাল করেছেন। জয়পুরহাটের শহীদ আবুল কাশেম ময়দানে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে ২৩ জন শহীদের নামের তালিকা রয়েছে। ওই তালিকার ১৭ নম্বরে তাঁর বাবা ছমির উদ্দিন মণ্ডলের নাম আছে। এ ছাড়া ১৯৯৬ সালে আক্কেলপুর রেলস্টেশন সড়কের আক্কেলপুর প্রেসক্লাব কার্যালয়ের পূর্ব পাশে রেলওয়ের মাঠটি ‘শহীদ ছমির উদ্দিন মণ্ডল স্মৃতি পার্ক’ নামকরণ করা হয়।
গ্রন্থনা: রবিউল ইসলাম, প্রতিনিধি, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট
Also Read
-
মানুষের হাত-পা কেটে নিজেই ‘অস্ত্রোপচার’ করতেন মিল্টন সমাদ্দার: ডিবি
-
ট্রেনের এলোমেলো সূচি আজও পুরো স্বাভাবিক হয়নি, দেরিতে যাত্রা রংপুরে
-
শুক্রবার ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি, ভুল করে ফেসবুকে পোস্ট হয়েছিল: মন্ত্রণালয়
-
৩৩৫ রোগীকে চিকিৎসাপত্র দেওয়ার পর জানা গেল তিনি ভুয়া চিকিৎসক
-
ইজারার পুরো টাকা না দিয়েই গাবতলী পশুর হাট দখল, হাসিল আদায় ডিপজলের