শহীদ বুদ্ধিজীবী
আবুল বাশার মহিউদ্দিন আহম্মদ
শহীদ বুদ্ধিজীবী, ভাষাসৈনিক, শিক্ষক, হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জ, ঢাকা বিভাগ।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেলেও তাদের দোসর খুনি আলবদরের হাত থেকে রেহাই পাননি শিক্ষক আবুল বাশার মহিউদ্দিন আহম্মদ। বাজার করতে যাওয়ার সময় ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় কিশোরগঞ্জের এই খ্যাতনামা শিক্ষক ও ভাষাসৈনিককে।
শহীদ এ বি মহিউদ্দিন আহম্মদের জন্ম ১৯২৮ সালে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পানান গ্রামে। বাবা শেখ কমধর, মা কলিমুন নেছা। কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন তিনি। কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কিশোরগঞ্জের অন্যতম ভাষাসৈনিক ছিলেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়েছিলেন। গ্রামবাসীর অনুরোধে তিনি গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন। কিছুদিন পর অবশ্য ইস্তফা দিয়ে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। তিনি কিশোরগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্নে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
মহিউদ্দিন আহম্মদ কিশোরগঞ্জ এলাকার কোদালিয়া, নানশ্রী, কাদিরপুরসহ বিভিন্ন স্কুলে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি তাড়াইল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বাংলা একাডেমির রশীদ হায়দার সম্পাদিত স্মৃতি-১৯৭১ গ্রন্থের পুনর্বিন্যাসকৃত তৃতীয় খণ্ডে মহিউদ্দিন আহম্মদকে নিয়ে তাঁর ছেলে ওয়াহিদুজ্জামানের একটি স্মৃতিকথা রয়েছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত বিশেষ স্মরণিকায় জেলায় রাজাকার আলবদরদের হাতে শহীদদের তালিকায় প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন আহম্মদের নাম রয়েছে।
স্বাধীনচেতা এ বি মহিউদ্দিন আহম্মদ তাঁর ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করতেন। এ কারণে একাত্তরের জুনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁকে স্কুল থেকে ধরে নিয়ে যায়। তাঁর বড় ছেলে ওয়াহিদুজ্জামান গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে জানান, হানাদার সেনারা তাঁর বাবাকে দুই দিন বন্দী করে রেখে অত্যাচার করে ছেড়ে দিলেও তাদের দোসর আলবদরদের হাত থেকে তিনি থেকে রক্ষা পাননি। একাত্তরের ১০ নভেম্বর তাঁর বাবা গিয়েছিলেন শহরের কাছারিবাজারে কাঁচাবাজার করার জন্য। তখন ছিল রমজান মাস, তিনি রোজাও রেখেছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল প্রতিবেশী এক শিশু। কিশোরগঞ্জ শহরের বটতলা এলাকায় আসতেই দুই আলবদর তাঁকে ধরে মারধর করে রিকশার পাদানিতে বসিয়ে রেলস্টেশন–সংলগ্ন ক্যাম্পে নিয়ে যায়। শিশুটি দৌড়ে বাড়িতে খবর দেয়।
ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি, স্কুলে ছিলাম। হেড স্যার আমাকে ক্লাস থেকে ডেকে নিয়ে বললেন, “তোমার ছুটি, বাসায় চলে যাও।” ছুটি পেয়ে আমি মহাখুশি। বাসায় ফিরে জানতে পারি বাবাকে আলবদররা ধরে নিয়ে গেছে। সবাই বলছিল বাবা ফিরে আসবে। কিন্তু তিনি আর ফিরে আসেননি। পরে আমরা জানতে পারি, রেলস্টেশনসংলগ্ন রাজাকার ক্যাম্পে ওই দিন রাতে বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বাবার লাশ আমরা পাইনি।’
ওয়াহিদুজ্জামান জানান, তাঁর মা জমিলা খাতুন অনেক কষ্ট করে তাঁদের চার ভাই ও পাঁচ বোনকে বড় করেছেন। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁর বাবাকে হত্যার মামলা করা হয়েছে। ২০১৭ সালে তাঁর মা মারা গেছেন। তাঁর আফসোস, স্বামী হত্যার বিচার তিনি দেখে যেতে পারেননি। পরিবারের পক্ষ থাকে তাঁরা চান মামলাটির দ্রুত রায় হোক। পাশাপাশি শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে তাঁর বাবাকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
গ্রন্থনা: তাফসিলুল আজিজ, কিশোরগঞ্জ
Also Read
-
ব্যবসায়ী ও কোটিপতিদের নিয়ন্ত্রণে উপজেলা পরিষদ
-
ভোট পড়ে ৩০০, বিকেলে হয়ে যায় ৩ হাজার, বললেন আওয়ামী লীগ নেতা
-
শত্রুদের এড়িয়ে কী কৌশলে রাজনীতিকে কবজা করেন স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী
-
বাংলাদেশকে নিজের চোখ দিয়ে দেখে যুক্তরাষ্ট্র
-
মাত্র একজন কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান? দক্ষিণ আফ্রিকার এই বিশ্বকাপ স্কোয়াড ‘অগ্রহণযোগ্য’