শহীদ বুদ্ধিজীবী
অজিত কুমার চক্রবর্তী
শহীদ বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক, শিবালয়, মানিকগঞ্জ, ঢাকা
অসহায় দরিদ্র মানুষদের বিনা পয়সায় চিকিৎসাসেবা দিতেন মানিকগঞ্জের অজিত কুমার চক্রবর্তী। এলাকার মানুষ বলতেন ‘গরিবের চিকিৎসক’। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও আশ্রয় দিতেন। তাঁর ঘরবাড়ি ও সম্পদের প্রতিও রাজাকারদের লোভ ছিল। এসব কারণে তারা জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে অজিত চক্রবর্তীকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। ঘাতক সেনারা হাত-পা বেঁধে তাঁকে যমুনায় ফেলে দেয়। সেই অবস্থাতেও সাঁতরে কূলে উঠলে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাঁকে হত্যা করে বর্বর ঘাতকের দল।
শহীদ অজিত কুমার চক্রবর্তীর জন্ম ১৯২১ সালে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার দক্ষিণ তেওতা গ্রামে। তাঁর বাবা আদিনাথ চক্রবর্তী ভারতের কোচবিহারে সরকারি চাকরি করতেন। মা প্রমীলা সুন্দরী দেবী গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। অজিত চক্রবর্তী স্থানীয় তেওতা একাডেমি থেকে ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর হোমিওপ্যাথিতে এইচএমবি ডিগ্রি নিয়ে নিজ এলাকায় চিকিৎসাসেবা শুরু করেন। বাড়িতেই তাঁর চেম্বার ছিল। আশপাশের গ্রাম থেকে প্রচুর রোগী আসত তাঁর কাছে। জরুরি প্রয়োজনে ডাকলে দূরের গ্রামে গিয়েও রোগী দেখতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তেওতা এলাকার জেলে গুলিবিদ্ধ প্রভাতচন্দ্র হালদারসহ এলাকার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি গোপনে চিকিৎসাসেবা দেন। মুক্তিযোদ্ধারা অনেক সময় তাঁর বাড়িতে আশ্রয় নিতেন। এ রকম একজন মুক্তিযোদ্ধা রতন কুমার বিশ্বাসকে পরে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করেছিল।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও আশ্রয় দেওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় রাজাকাররা একাত্তরের ২৮ নভেম্বর রাতে অজিত চক্রবর্তীর বাড়ি ঘেরাও করে তাঁকে তুলে নেয়। পরিবারকে জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তারা অজিত চক্রবর্তীকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। হানাদাররা তাঁর হাত-পা বেঁধে নৌকায় তুলে যমুনা নদীতে ফেলে দেয়। তিনি অনেক কষ্টে সাঁতরে কূলে উঠে এলে তারা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। এরপর রাজাকাররা অজিত চক্রবর্তীর বাড়িতে হামলা করে সেখানে যা ছিল সব লুটে নিয়ে যায়।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন ছাপা হলে মানিকগঞ্জ সদরের খাবাশপুর আদর্শ ডিগ্রি কলেজের বাংলার প্রভাষক মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর অজিত কুমার চক্রবর্তীর ছবি ও তথ্য পাঠান। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে তাঁর মাঠপর্যায়ে গবেষণার তথ্য নিয়ে প্রকাশিত স্মৃতি ও শ্রুতিতে মানিকগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধ বইতে এবং সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ বইতে অজিত চক্রবর্তীর জীবনী রয়েছে। এ ছাড়া শহীদদের স্মরণে নির্মিত তেওতা একাডেমি–সংলগ্ন স্মৃতিফলকেও তাঁর নাম রয়েছে।
অজিত চক্রবর্তীর বড় ছেলে তেওতা একাডেমির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অজয় কুমার চক্রবর্তী বলেন, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর মা রেণুকা চক্রবর্তীর কাছে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি ও দুই হাজার টাকা অনুদান পাঠিয়েছিলেন। তাঁর মায়ের বয়স এখন ৮৫ বছরের বেশি। তাঁরা তিন ভাইবোন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও তাঁর বাবা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পাননি। এটা তাঁদের ও এলাকাবাসীর কাছে খুব দুঃখের কারণ হয়ে আছে।
গ্রন্থনা: আবদুল মোমিন, মানিকগঞ্জ
Also Read
-
ঠেকানো যাচ্ছে না রিজার্ভের পতন
-
আপনজনদের কাছে পেয়ে আপ্লুত এমভি আবদুল্লাহর নাবিকেরা
-
মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো কবে নিজ অর্থ নিতে পারবে, জানতে চেয়েছেন লু
-
ঝালকাঠিতে উঠান বৈঠকে হামলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ আহত ১০
-
রাফার আরও ভেতরে ইসরায়েলি ট্যাংক