বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
হুমায়ুন কবীর চৌধুরী, বীর প্রতীক
গ্রাম লক্ষ্মীপুর, উপজেলা নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা।
বাবা শফিকুর রহমান চৌধুরী, মা জাহানারা বেগম।
স্ত্রী পারভীন কবীর। তাঁদের দুই ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ২২। গেজেটে নাম মোহা. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী
মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবীর চৌধুরী বর্তমানে কানাডায় বসবাস করেন। ১৯৭১ সালে তিনি যুদ্ধ করেন দুই নম্বর সেক্টরে। ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমীর পক্ষ থেকে তাঁর একটি সাক্ষাত্কার নেওয়া হয়। সেখানে তিনি বলেন:
‘১৭ মে আমাকে অপারেশনে পাঠানো হয়। তখন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়। আমাদের ওপর নির্দেশ ছিল হঠাত্ করে আক্রমণ করো এবং সরে এসো। আমরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে এক দলকে রক্ষণভাগে রাখি। দ্বিতীয় দল মর্টারের সাহায্যে পাকিস্তানি সেনাদের একটি ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়।
‘আমি ছিলাম মর্টার শেলিংয়ে। শেলিং করে আমরা চলে আসি। আসার সময় পাকিস্তানি সেনারা গোলন্দাজ বাহিনীর সাহায্যে আমাদের ওপর প্রচণ্ড গোলাগুলি করে। আমরা সবাই নিরাপদে ফিরে আসি। পরে খবর পেয়েছিলাম, ওদের (পাকিস্তানি সেনাবাহিনী) ১৫ জনের মতো নিহত হয়েছে।
‘এটাই ছিল আমার প্রথম অপারেশন। ক্যাম্পে আমাদের সব মুক্তিযোদ্ধা দেখি শত্রু খতম বা আক্রমণের এক নেশার মধ্যে আছে। খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম বা কাপড়চোপড়ের অভাব তাদের ছিল, কিন্তু সেদিকে কারও খেয়াল ছিল না। শত্রুর খোঁজ পেলে তারা তত্ক্ষণাত্ আক্রমণ করার আনন্দে মেতে উঠত। দেশপ্রেম এত প্রবল হয়ে উঠেছিল যে মৃত্যুভয়ও তাদের টলাতে পারেনি। কিছুদিনের মধ্যে আমাকেও এই নেশায় পেয়ে বসল।
‘কসবা হচ্ছে এমন একটি স্থান, যার ভৌগোলিক গুরুত্ব অপরিসীম। কসবা রেলস্টেশন থেকে ভারতীয় সীমান্ত দেখা যায়। সীমান্তের পাশ দিয়ে ছোট ছোট পাহাড়। মে মাসের ২২/২৩ তারিখে খবর পেলাম, পাকিস্তানি সেনারা দুটি ট্রলি বোঝাই অস্ত্রশস্ত্র মন্দভাগ রেলস্টেশন থেকে সালদা নদীর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। রেলট্রলির দুই পাশ দিয়ে এক প্লাটুন পাকিস্তানি সেনা টহল দিতে দিতে হেঁটে যাচ্ছে।
‘ট্রলি দুটি মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত দিল। আমরা এসএমজি, এলএমজির সাহায্যে শত্রুর ওপর অতর্কিতে গুলি ছুড়তে লাগলাম। কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা সঙ্গে সঙ্গে পড়ে গেল। বাকি পাকিস্তানি সেনারা ট্রলির ওপাশে পজিশন নিয়ে আমাদের ওপর গুলি ছুড়তে থাকল। আমরা রকেট লঞ্চারের সাহায্যে ট্রলির ওপর আঘাত হানলাম। ট্রলির অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
‘তারপর পাকিস্তানি সেনারা আর্টিলারির সাহায্যে আমাদের ওপর অবিরাম গোলাবর্ষণ করে তাদের আহত জওয়ানদের নিয়ে পালিয়ে যায়। পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যাওয়ার পর আমি কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। দেখি ভাঙাচোরা অনেক অস্ত্র পড়ে আছে। এর মধ্যে কিছু ভালো অস্ত্র ছিল। এ এক দুঃসাহসিক অভিযান ছিল, যা আমার জীবনে অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে।’
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
নয়াপল্টন থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত আজ শোভাযাত্রা করবে বিএনপি
-
ট্রাম্পের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে সাক্ষাৎ করবেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট
-
অপেক্ষার পর খালি হাতে ফিরতে হয় অনেককে
-
ট্রাম্পের বিজয় বিশ্বে যেসব বদল আনতে পারে
-
‘অগ্রহণযোগ্য আচরণে’র দায়ে দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ আলজারি জোসেফ