বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

হারুনুর রশিদ, বীর প্রতীক

  • গ্রাম আঙ্গিয়ারপোতা, সদর, চুয়াডাঙ্গা।

  • বাবা আহমেদ আলী ওরফে আমোদ আলী। স্ত্রী সুরাতন নেছা। তাঁদের এক ছেলে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ৩৭৫।

  • শহীদ ২৭ নভেম্বর ১৯৭১।

হারুনুর রশিদের দলনেতা খবর পেলেন, তাঁদের এলাকায় একদল পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার টহল দিতে এসেছে। দলনেতা তাদের আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন। দ্রুত তাঁরা তৈরি হয়ে অবস্থান নেন বিভিন্ন জায়গায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা চলে এল তাঁদের আওতার মধ্যে। তখন গর্জে উঠল তাঁদের সবার অস্ত্র। পাকিস্তানি সেনারাও তাঁদের পাল্টা আক্রমণ করল। পাল্টাপাল্টি আক্রমণ চলতে থাকল। পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী রাজাকাররা সংখ্যায় ছিল অনেক বেশি। সে তুলনায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা খুবই কম। তার পরও হারুনুর রশিদসহ কয়েকজন সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন। একপর্যায়ে হারুনুর রশিদ গুলি করতে করতে এগিয়ে যেতে থাকেন সামনের দিকে। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারলেন না। ক্রল করে এগিয়ে যাওয়ার সময় পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে দেখে ফেলে। তখন তারা গুলি ছুড়তে শুরু করে। হারুনুর রশিদ গুলিবিদ্ধ হন। সহযোদ্ধারা চেষ্টা করলেন তাঁকে সরিয়ে নিতে। কিন্তু ব্যর্থ হলেন। শত্রুর গুলির মধ্যে তাঁরা নড়াচড়াও করতে পারলেন না। যুদ্ধ শেষে যখন যেতে পারলেন, তখন হারুনুর রশিদের জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে।

এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বরের। ঘটেছিল চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানার বেগমগঞ্জে। তখন মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়। এ সময় সীমান্ত অতিক্রম করে হারুনুর রশিদসহ একদল গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেন জীবননগরে। সেদিন সকালে হারুনুর রশিদের দলনেতা খবর পান, পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী রাজাকাররা বেগমগঞ্জে টহল দিতে আসবে। তখন তাঁরা বেগমগঞ্জের কাছাকাছিই ছিলেন। খবর পেয়ে হারুনুর রশিদের দলনেতা পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের সংখ্যা ছিল তাঁদের প্রায় দ্বিগুণ। তার পরও মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করেন। পাকিস্তানি সেনারা প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। বিশেষত হারুনুর রশিদসহ কয়েকজন বীরত্বের পরিচয় দেন। তাঁদের বীরত্ব ও রণকৌশলে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা কিছুক্ষণ যুদ্ধ করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদেরও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়।

হারুনুর রশিদ ১৯৭১ সালে ছিলেন ২৫ বছর বয়সী যুবক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৫ এপ্রিল ভারতে চলে যান। সেখানে ডোমপুকুর ও বাঙালজি ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিবাহিনীর ৮ নম্বর সেক্টরের বানপুর সাব-সেক্টরের অধীনে তিনি যুদ্ধ করেন। সীমান্ত এলাকায় কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে অংশ নেন। পরে একটি দলের সঙ্গে তাঁকে দেশের ভেতরে পাঠানো হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান