বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ, বীর বিক্রম
লালমোহন, ভোলা। বর্তমান ঠিকানা বাড়ি কে-২১, সড়ক ২৭, বনানী, ঢাকা।
বাবা আজহার উদ্দিন আহম্মদ, মা করিমুন্নেছা।
স্ত্রী দিলারা হাফিজ। তাঁদের এক মেয়ে ও দুই ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ১০।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ দলনেতা (কোম্পানি কমান্ডার) হিসেবে বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। এর মধ্যে কামালপুরের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত কামালপুর। ৩১ জুলাই এখানে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তাঁর নিজের বয়ানে (১৯৭৩) এই যুদ্ধ:
‘ভোর সাড়ে তিনটার সময় দুই কোম্পানি (বি ও ডি) মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কামালপুর বিওপিতে আক্রমণ করি। বি কোম্পানির কমান্ডার ছিলাম আমি নিজে। ডি কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন মমতাজ (বীর উত্তম)। আমরা একটি ফিল্ড ব্যাটারির সাহায্য নিই। ক্যাপ্টেন মাহবুবের (মাহবুবুর রহমান বীর উত্তম, কানাইঘাট যুদ্ধে শহীদ) নেতৃত্বে এ কোম্পানিকে পাঠানো হয় উঠানিপাড়ায়, যাতে তারা কাট অফ পার্টিতে যোগ দিতে পারে। আমরা এফইউপিতে পৌঁছানোর আগেই আমাদের পক্ষ থেকে আর্টিলারির গোলাবর্ষণ শুরু হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে এটা আমরা এফইউপিতে পৌঁছার পর শুরু হওয়ার কথা ছিল। এতে মুক্তিযোদ্ধারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। এ সময় শত্রুপক্ষও (পাকিস্তানি সেনাবাহিনী) আর্টিলারি ও ভারী মর্টারের সাহায্যে গোলাবর্ষণ শুরু করে।
‘তার পরও আমি এবং সালাহউদ্দিন আমাদের দলের মুক্তিযোদ্ধাদের একত্র করে শত্রুদের আক্রমণ করি। আমরা “জয় বাংলা” ধ্বনি দিতে দিতে সম্মুখ দিকে অগ্রসর হই। মাইনফিল্ড অতিক্রম করে কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা শত্রুর প্রতিরক্ষার অর্ধেক জায়গা দখল করে নিই। শত্রুরা পেছনে হটে যায়। শত্রুরা পেছনে অবস্থান নিয়ে আর্টিলারি ও মর্টারের গোলাবর্ষণ করতে থাকে। ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসের সঙ্গে তাঁর কোম্পানির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। শত্রুর গোলাগুলিতে তিনি হঠাত্ শহীদ হন। একটু পর আমিও মর্টারের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হই। আমার শরীরের পাঁচ জায়গায় স্প্লিন্টার লাগে। আমাকে পেছনে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আক্রমণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের দুই দলই নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে। তাদের মনোবল ভেঙে যায়। ফলে তারা পিছিয়ে আসে।’
হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। তখন তাঁর পদবি ছিল ক্যাপ্টেন।
৩০ মার্চ আক্রান্ত হওয়ার পর দেশমাতৃকার টানে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেরি করেননি তিনি। এ সময় তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিরোধ করেন।
পরে সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে বেনাপোলে সমবেত হন। সেখানেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ করেন। এরপর ভারতে যান। সেখানে পুনরায় সংগঠিত হয়ে তিনি প্রথমে ১১ নম্বর সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাবসেক্টরের অধীন কামালপুরে যুদ্ধ করেন। উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ কামালপুর, ধলই বিওপি, কানাইঘাট ও সিলেট এমসি কলেজের যুদ্ধ।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারে এশিয়ায় বেশি পিছিয়ে বাংলাদেশের নারীরা
-
পৃথিবীর কোন দেশে সেন্ট্রাল ব্যাংকে ঢুকতে পারছে অবাধে: ওবায়দুল কাদের
-
পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসনে হাজার কোটি টাকা বাড়তি চায় চীনা ঠিকাদার
-
বিশ্বের সেরা এয়ারলাইনস আট মাসের বেতনের সমান বোনাস দিচ্ছে
-
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজের ভেন্যুতে ঝড় বয়ে গেছে