বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
হাজারীলাল তরফদার, বীর প্রতীক
গ্রাম রানীয়ালী, ইউনিয়ন পাশাপোল, উপজেলা চৌগাছা, যশোর। বর্তমান ঠিকানা কৃষ্ণচন্দ্রপুর, ঝিকরগাছা, যশোর।
বাবা রসিকলাল তরফদার, মা শৈলবালা তরফদার।
স্ত্রী শেফালী রানী তরফদার ও সুমিত্রা রানী তরফদার। তাঁদের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ৩৭৭।
যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার অন্তর্গত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম দোসতিনা। ঝিকরগাছা-দোসতিনা সড়কটি যশোর জেলার পশ্চিমাংশে যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই সড়কে নিয়োজিত ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহলদল। তারা এ অঞ্চলে নিয়মিত ঘুরেফিরে টহল দিত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গতিবিধি লক্ষ রাখত।
জুলাই মাস থেকে যশোর অঞ্চলের প্রশিক্ষণ পাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে আসতে থাকলেন ৮ নম্বর সেক্টরে। কয়েকটি দল পাঠানো হলো বয়রা সাবসেক্টরে। কিন্তু তাঁরা বাংলাদেশে ঢুকতে পারছেন না পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহলদলের কারণে। তাই তাদের ওপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত হলো।
সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধে একদিন। হাজারীলাল তরফদারসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা অ্যামবুশ করলেন দোসতিনায়। সুবিধাজনক এক স্থানে তাঁরা ফাঁদ পেতে অপেক্ষা করতে থাকলেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহলদল তাঁদের ফাঁদের মধ্যে উপস্থিত হতেই গর্জে উঠল হাজারীলালসহ সবার অস্ত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে তাত্ক্ষণিক হতাহত হলো কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। তবে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে তারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। তখন পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। হাজারীলাল তরফদার সেদিন যুদ্ধে যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব দেখান। সেদিন যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহলদলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ছয়জন নিহত ও দুজন আহত হয়। বাকিরা পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
১৯৬৯ সালে অষ্টম শ্রেণীতে ওঠার পর আর পড়ালেখার সুযোগ হয়নি হাজারীলাল তরফদারের। এরপর তিনি বাড়িতে নানা সাংসারিক কাজে জড়িত ছিলেন। কৃষিকাজও করতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নেন। পরে ভারতের চাকুলিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাবসেক্টরে।
হাজারীলাল তরফদার বয়রা সাবসেক্টরে দুর্ধর্ষ ও সাহসী যোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। অনেক সম্মুখ ও গেরিলাযুদ্ধে তিনি অংশ নেন। এর মধ্যে চৌগাছা, নাভারন, ছুটিপুর, গোয়ালহাটি, গদখালী, কাগজপুকুর ও বেনাপোলের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
দিনে ১৭৫ জন বিষপানে হাসপাতালে
-
ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু
-
দেশের আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বেড়ে ৯২৫ কোটি ডলারে উঠেছে
-
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝরাতে ছাত্রলীগের অস্ত্র নিয়ে মহড়া, হলে পুলিশের তল্লাশি
-
মিরাজ–চমক দিতে পারেন নির্বাচকেরা