বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক

  • গ্রাম উত্তর বুড়িশ্চর, উপজেলা হাটহাজারী, চট্টগ্রাম। বর্তমান ঠিকানা বাসা ৩২৫, লেন ২২, ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা।

  • বাবা এস এম হাফেজ আহমেদ, মা শামসুন নাহার।

  • স্ত্রী ফোরকান ইবরাহিম। তাঁদের এক মেয়ে ও এক ছেলে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ১৮।

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম

নির্ধারিত সময়ে ভারত থেকে শুরু হয় দূরপাল্লার গোলাবর্ষণ। চারদিকের মাটি কেঁপে ওঠে। গোলাবর্ষণ শেষ হওয়া মাত্র সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর। শুরু হয় মেশিনগান, রাইফেলসহ অন্যান্য অস্ত্রের অবিরাম গোলাগুলি। দুই পক্ষে সমানতালে যুদ্ধ চলে।

একপর্যায়ে পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণের তীব্রতা প্রচণ্ডভাবে বেড়ে যায়। এ রকম অবস্থায় দলনেতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ইবরাহিম অত্যন্ত দক্ষতা এবং যথাযথভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যে নিজের জীবন বাজি রেখে সহযোদ্ধাদের মনে তিনি সাহস জুগিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় সহযোদ্ধারা অনুপ্রাণিত হয়ে সাহসের সঙ্গে পাল্টা আক্রমণ চালান। তাঁদের বীরত্বে থেমে যায় বেপরোয়া পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা। যুদ্ধ চলতে থাকে।

এ ঘটনা আজমপুরের। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আখাউড়া রেলজংশন ঘিরে যে প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরি করেছিল তার উত্তর অংশ ছিল এই আজমপুর। ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথে আখাউড়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত। আখাউড়া সামরিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই আজমপুর দখলের মাধ্যমেই শুরু হয় আখাউড়া দখলের যুদ্ধ। ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আজমপুর, সিংগারবিল, মুকুন্দপুর ও আখাউড়ায় তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

৪ ডিসেম্বর ভোরে আখাউড়া মুক্ত হয়। দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অন্যান্য দলসহ ‘সি’ কোম্পানির দলনেতা ইবরাহিমও সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সেই যুদ্ধে। পাকিস্তানি প্রতিরক্ষার ট্রেঞ্চে থাকা সেনাদের বধ বা অপসারণ করতে মুক্তিযোদ্ধারা ৩ ডিসেম্বর সারা দিন ও রাত কদমে কদমে অগ্রসর হন। ইবরাহিমের সাহসী নেতৃত্বে তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন অসম্ভবকে সম্ভব করেন।

ইবরাহিম ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল জয়দেবপুর রাজবাড়িতে।

প্রতিরোধযুদ্ধে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তিনি হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এরপর ভারতে যান। সেখানে আবার সংগঠিত হওয়ার পর তিনি প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরের অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর এস ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের চার্লি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তেলিয়াপাড়া, মাধবপুর, আখাউড়া, লালপুর ও ডেমরার যুদ্ধ তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান