বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

সুলতান মাহমুদ, বীর উত্তম

  • দাগনভুঞা, ফেনী। বর্তমান ঠিকানা বাসা ১০, সড়ক ৫০, গুলশান ২, ঢাকা।

  • বাবা নূরুল হুদা, মা আঙ্কুরের নেছা।

  • স্ত্রী ফেরদৌস আরা মাহমুদ। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ৬০।

সুলতান মাহমুদ

সুলতান মাহমুদ ১৯৭১ সালে ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের মৌরীপুর বিমানঘাঁটিতে। এর অবস্থান করাচিতে। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে তিনি মে মাসে সেখান থেকে শ্রীলঙ্কা, ঢাকা হয়ে ভারতে যান। ভারতে যাওয়ার পথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁকে আটকের চেষ্টায় তাড়া করে। এ অবস্থায় দাউদকান্দি ফেরিঘাটের কাছে তিনি সাঁতরে মেঘনা নদী পার হন। অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত ভারতে পৌঁছান।

তিনি প্রথমে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরে। পরে ১ নম্বর সেক্টরে। বেশ কয়েকটি অপারেশনে তিনি সাহসের সঙ্গে অংশ নেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের মদুনাঘাট বিদ্যুত্ সাবস্টেশন ধ্বংসের অপারেশন উল্লেখযোগ্য।

মদুনাঘাট বিদ্যুত্ স্টেশনটির অবস্থান চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কের হালদা নদীর পশ্চিম পাশে। সেখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল। সাবস্টেশনের চারদিকের বাংকারে ছিল তাদের অবস্থান। অক্টোবর মাসের শেষে একদিন সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা সেখানে অতর্কিতে আক্রমণ করেন। তাঁদের আক্রমণে সাবস্টেশনটি ধ্বংস হয়। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে সুলতান মাহমুদ আহত ও তাঁর এক সহযোদ্ধা শহীদ হন। সেদিন তিনি যথেষ্ট রণকৌশল ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন।

এরপর তিনি আর স্থলযুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। কয়েক দিন পর সুলতান মাহমুদকে বিমান উইংয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর বিমান উইংয়ের মাধ্যমে প্রথম যে আক্রমণ পরিচালনা করা হয়, এর একটির দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর। তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত হয় গোদনাইল অপারেশন। এ অপারেশনে তাঁর সহযোদ্ধা ছিলেন বদরুল আলম (বীর উত্তম)। তাঁরা একটি অ্যালুয়েট হেলিকপ্টারের সাহায্যে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল তেলের ডিপোতে আক্রমণ চালান। তাঁরা হেলিকপ্টার থেকে ১৪টি রকেট নিক্ষেপ করে ইএসএসওর দুটি তেলের ডিপো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেন। আরও কয়েকটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সুলতান মাহমুদ পরে সিলেট, কুলাউড়া, কুমিল্লা, ভৈরব, শমশেরনগরসহ আরও কয়েকটি জায়গায় হেলিকপ্টারের সাহায্যে আক্রমণে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তিনি ও শাহাবউদ্দীন আহমেদ (বীর উত্তম) একদিন হেলিকপ্টারে চেপে সিলেট শহরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। বিমানবন্দরে অবতরণ করা মাত্র তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়েন। হেলিকপ্টারে কয়েকটি গুলি লাগে। সুলতান মাহমুদ অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে হেলিকপ্টারটি নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।

সুলতান মাহমুদ স্বাধীনতার পর ধাপে ধাপে এয়ার ভাইস মার্শাল পদে উন্নীত হন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান