বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
সামসুল হক, বীর প্রতীক
গ্রাম হাতুড়াবাড়ী, বাইদর ইউনিয়ন, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
বাবা আবদুর রাজ্জাক, মা চন্দ্র বানু। অবিবাহিত।
খেতাবের সনদ নম্বর ২৪৯।
শহীদ ২২ নভেম্বর ১৯৭১।
সামসুল হক ইপিআরে চাকরি করতেন। কর্মরত ছিলেন সিলেট ইপিআর হেডকোয়ার্টারের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের গঙ্গাসাগর সাব-সেক্টর এলাকায়। তবে তিনি কোন কোন যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানা যায়নি। লতুয়ামুড়া-চন্দ্রপুর যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। এ তথ্য দিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাইউম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা রেলস্টেশনের পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে চন্দ্রপুর। ১৮ নভেম্বর মিত্রবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গঙ্গাসাগর সাব-সেক্টরের অধিনায়ক মেজর আইন উদ্দিনকে (বীর প্রতীক, পরে মেজর জেনারেল) জানান, তাঁরা যৌথভাবে চন্দ্রপুর-লতুয়ামুড়ায় আক্রমণ করবেন। সেখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত একটি ঘাঁটি। কিন্তু মিত্রবাহিনীর এই আক্রমণের পরিকল্পনা মুক্তিবাহিনীর গঙ্গাসাগর সাব-সেক্টরের অধিনায়কের মনঃপূত ছিল না। কারণ, চন্দ্রপুর গ্রামের সঙ্গেই লতুয়ামুড়া পাহাড়। পাহাড়ে আছে পাকিস্তানি সেনাদের সুরক্ষিত অবস্থান। চন্দ্রপুরে আক্রমণ করলে পাকিস্তানি সেনারা সহজেই মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষতি করতে পারবে। কিন্তু মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার তাঁর এই যুক্তি মানতে রাজি ছিলেন না। এ অবস্থায় আইন উদ্দিন তাঁকে অনুরোধ করেন, আক্রমণে যতজন মুক্তিযোদ্ধা যাবেন, মিত্রবাহিনীর ততজন সেনাকেও তাতে অংশ নিতে হবে।
ব্রিগেডিয়ার এই অনুরোধ মেনে নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২ নভেম্বর মিত্র ও মুক্তিবাহিনী যৌথভাবে পাকিস্তানি অবস্থানে আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনীর একটি দলে ছিলেন সামসুল হক। চন্দ্রপুরে সেদিন ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর একজন মেজর (কোম্পানি কমান্ডার), তিনজন জুনিয়র কমিশন অফিসারসহ ৪৫ জন এবং মুক্তিবাহিনীর লেফটেন্যান্ট খন্দকার আবদুল আজিজসহ ২২-২৩ জন শহীদ হন। আহত হন ৩৫ জন। সারা রাত চলে যুদ্ধ। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পিছু হটে। মুক্তি ও মিত্রবাহিনী চন্দ্রপুর দখল করে। কিন্তু বেশিক্ষণ এ অবস্থান তাঁদের পক্ষে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তানি সেনারা আবার প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে চন্দ্রপুর-লতুয়ামুড়া দখল করে নেয়। ২৩ নভেম্বর বিকেলে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল আহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ উদ্ধারের জন্য চন্দ্রপুরে যান। কিন্তু তাঁদের কয়েকজন পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে শহীদ হন। ওই দলের সদস্যরা মাত্র আটজনের লাশ উদ্ধারে সক্ষম হন। পাকিস্তানি সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে পড়ে থাকা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করে।
চন্দ্রপুরের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্ব ও সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েন। এ যুদ্ধের পর তাঁদের মনোবলে বড় রকমের চিড় ধরে। কারণ, এত মুক্তিযোদ্ধা একসঙ্গে ২ নম্বর সেক্টরের কোনো রণাঙ্গনে শহীদ হননি।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
শেষ দিনে ঢাকা-১৭ আসনে তারেক রহমানের মনোনয়নপত্র জমা
-
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আমীর খসরু বললেন, আজ বড় আনন্দের দিন
-
কারওয়ান বাজারে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধনে অতর্কিত হামলা, প্রতিবাদে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ
-
ঢাকা-১৪ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আহমাদ বিন কাসেম
-
আওয়ামী লীগের ভোট পেতে চায় জাতীয় পার্টির দুই অংশই