বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

সাইদুল আলম, বীর প্রতীক

  • গ্রাম চরকরমজী, সদর, বরিশাল। বর্তমান ঠিকানা কাঁঠালবাগান, ডেন্ডাবর, সাভার, ঢাকা।

  • বাবা ইসরাইল বিশ্বাস, মা লালবানু বিবি।

  • স্ত্রী সেলিনা আলম। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ১০৭।

সাইদুল আলম

মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি দল (এক ব্যাটালিয়ন শক্তি) গৌরীপুরে পৌঁছার পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিজ প্রতিরক্ষা অবস্থান ছেড়ে পূর্ণ শক্তিতে অগ্রসর হয়ে তাঁদের আক্রমণ করে। আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ বেশ নাজুক অবস্থায় পড়ে যায়।

এ সময় লেফটেন্যান্ট ওয়াকার হাসানের (বীর প্রতীক, পরে মেজর) নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা ঝোড়োগতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের মেশিনগান গ্রুপ ও এলএমজি গ্রুপের ফায়ারিং সাপোর্ট নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সুকৌশলে অগ্রসর হয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নাকের ডগার মধ্যে পৌঁছে যায়।

সাইদুল আলম ছিলেন মেশিনগান গ্রুপে। তিনি সাহসের সঙ্গে মেশিনগান দিয়ে গুলি করে মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে অগ্রসর হতে সাহায্য করেন। এরপর দুই পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। সাইদুল আলম ও তাঁর সহযোদ্ধাদের মেশিনগানের গুলিতে হতাহত হয় অনেক পাকিস্তানি সেনা। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনারা পরাজিত হয় এবং জীবিতরা সিলেটে পালিয়ে যায়।

গৌরীপুর যুদ্ধের পর সাইদুল আলম ও তাঁর সহযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহম্মদের (বীর বিক্রম, পরে মেজর) নেতৃত্বে রওনা হন সিলেট শহর অভিমুখে। শহরের উপকণ্ঠে এমসি কলেজে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষাব্যূহ। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে সেখানে তাঁরা পৌঁছান।

একের পর এক যুদ্ধে সাইদুল আলম ও তাঁর সহযোদ্ধারা কিছুটা পরিশ্রান্ত। তাঁদের পরনে তেমন শীতবস্ত্রও নেই। তিন দিন তাঁরা প্রায় অনাহারে। কিন্তু তাঁদের যুদ্ধ করার আগ্রহে কোনোভাবে ভাটা পড়ল না।

শত্রুর নাকের ডগায় অর্থাত্ মাত্র ৫০০ গজ দূরত্বে টিলার ওপর ট্রেঞ্চ খুঁড়ে সাইদুল আলম ও তাঁর সহযোদ্ধারা অবস্থান নিতে শুরু করলেন। তখনই হঠাত্ শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। তাঁদের দলের কাছে তিন ইঞ্চি মর্টারের গোলা আছে মাত্র ১৪টি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই গোলা শেষ হয়ে গেল। সাইদুল এতে বিচলিত হলেন না। মেশিনগান দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে লাগলেন। মেশিনগান গ্রুপের নিপুণ গুলিবর্ষণে হতাহত হলো বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। শেষে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল।

সাইদুল আলম চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। ৩০ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বালুচ রেজিমেন্ট তাঁদের আক্রমণ করে। তখন তাঁরা যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে প্রথমে ১১ নম্বর সেক্টরে, পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান