বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
শেখ দিদার আলী, বীর প্রতীক
গ্রাম আড়ুয়াপাড়া, সদর, কুষ্টিয়া।
বাবা শেখ নূরুল ইসলাম, মা সুফিয়া খাতুন। অবিবাহিত।
খেতাবের সনদ নম্বর ৩৮১।
শহীদ ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। গেজেটে নাম দিদার আলী।
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধ। শেখ দিদার আলীসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে কয়েক দিন আগে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তাঁদের অবস্থান কুষ্টিয়ার সদর উপজেলায় (তখন থানা) গোপন এক শিবিরে। একদিন তাঁরা খবর পেলেন, তাঁদের এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল গ্রামবাসীকে নির্যাতন করছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন। সহযোদ্ধাদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করলেন। শেখ দিদার আলীসহ তাঁর সব সহযোদ্ধা এ ব্যাপারে একমত হলেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র বলতে এসএলআর, স্টেনগান আর রাইফেল। এ ছাড়া কয়েকটি গ্রেনেড। গুলির সংখ্যাও সীমিত। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করলে বেশিক্ষণ তা মোকাবিলা করার শক্তি তাঁদের নেই। এতে তাঁরা মনোবল হারালেন না। দ্রুত প্রস্তুত হয়ে রওনা হন অকুস্থলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁরা মুখোমুখি হলেন পাকিস্তানি সেনাদের। পাকিস্তানি সেনা আর রাজাকার মিলে সংখ্যায় মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে বেশি। সবাই এক স্থানে সমবেত। তারা নিরীহ গ্রামবাসীকে অত্যাচার-নির্যাতন করে তখন শহরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আয়োজন করছে। তাদের সঙ্গে আছে কিছু স্থানীয় দোসরও, অর্থাত্ রাজাকার।
গ্রাম থেকে লুটপাট করা অনেক মালামাল সেখানে স্তূপ করে রাখা। তিন-চারজন রাজাকার পাহারায়। আর পাকিস্তানি সেনারা লুটপাট করা মালামাল নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারায় ব্যস্ত। এতক্ষণ কোনো বাধা না পেয়ে তারা সবাই শিথিল অবস্থায়। মুক্তিযোদ্ধারা এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে অতর্কিতে আক্রমণ চালালেন।
আকস্মিক আক্রমণে হকচকিত পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা। তবে তারা, বিশেষত পাকিস্তানি সেনারা, নিজেদের সামলিয়ে নিমেষেই পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। মুক্তিযোদ্ধারা এতে দমে গেলেন না। সীমিত সম্বল নিয়েই পাকিস্তানি আক্রমণ বিপুল বিক্রমে মোকাবিলা করতে থাকলেন। মুখোমুখি যুদ্ধ চলতে থাকল।
বৃষ্টির মতো গুলি করছে পাকিস্তানি সেনারা। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের মাথা তোলা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ল। শেখ দিদার আলী এতে বিচলিত হলেন না। সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলেন। কিন্তু বেশি সময় পারলেন না। হঠাত্ পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া গুলি এসে লাগল তাঁর বুকে। তিনি ঢলে পড়লেন মাটিতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিভে গেল তাঁর জীবনপ্রদীপ।
এ ঘটনা ৫ সেপ্টেম্বরের, কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বংশীতলার কাছে দূর্বাচারা গ্রামে।
শেখ দিদার আলী পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করতেন কুষ্টিয়া টেলিফোন অফিসে। ১৯৭১ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ শেষে ভারতে যান। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের শিকারপুর সাবসেক্টরে।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো কবে নিজ অর্থ নিতে পারবে, জানতে চেয়েছেন লু
-
নতুন করে রিজার্ভ চুরি হয়নি: বাংলাদেশ ব্যাংক
-
সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী এলিস মুনরো আর নেই
-
‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন মেরিনা, পিতার নাম ছাড়াই সব সুবিধা পাবেন তিনি
-
‘সন্তান দুনিয়াতে আসবে, দেখতে পাব কি না, জানতাম না’