বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
শহীদ উল্লাহ, বীর প্রতীক
গ্রাম ফরদাবাদ, উপজেলা বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
বাবা আবদুল জলিল, মা আমেনা বেগম। স্ত্রী শায়েস্তা বেগম। তাঁদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ১০৯।
মৃত্যু ২০০২।
তীব্র শীত, অন্ধকার ও কুয়াশার বাধা উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যেতে থাকলেন সামনে। তাঁরা কয়েকটি দলে বিভক্ত। একটি দলে আছেন শহীদ উল্লাহ। রাত আনুমানিক ১১টা। তাঁরা সমবেত হলেন সিঙ্গারবিলের অদূরে।
চারদিক নিস্তব্ধ। মাঝেমধ্যে ভেসে আসছে ঝিঁঝিপোকার ডাক। একটু পর নির্ধারিত সময়েই (রাত ১১টা ৪৫ মিনিট) পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে শুরু হলো গোলাবর্ষণ। এই গোলা আসছে তাঁদের পেছন থেকে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ ব্যাটারি সীমান্ত থেকে দূরপাল্লার কামানের গোলাবর্ষণ করছে। এর তীব্রতা এমন যে, মুক্তিযোদ্ধাদের পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠছে। বিকট শব্দে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণের সুযোগে শহীদ উল্লাহ এবং তাঁর সহযোদ্ধারা আবার এগিয়ে যেতে থাকলেন। উদ্দেশ্য সিঙ্গারবিল রেলস্টেশন দখল করা। তাঁরা লক্ষ্যস্থলের আনুমানিক ৪০০ গজ দূরে পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে সীমান্ত এলাকা থেকে গোলাবর্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে ব্যাপক গোলাবর্ষণে পাকিস্তানি সেনারা ভীতসন্ত্রস্ত। তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান প্রায় তছনছ। এই সুযোগে মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর। নিমেষে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে শুরু হয়ে গেল মেশিনগান, এলএমজি আর রাইফেলের অবিরাম গোলাগুলি।
কুয়াশা আর শীতের মধ্যে যুদ্ধ করা বেশ কষ্টকর। সব উপেক্ষা করে শহীদ উল্লাহ ও তাঁর সহযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলেন। হতোদ্যম পাকিস্তানি সেনারা ভোররাতে পালিয়ে গেল। মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে এল সিঙ্গারবিল।
এরপর মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যেতে থাকলেন আজমপুর রেলস্টেশন অভিমুখে। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর বিকেলের মধ্যে আজমপুর রেলস্টেশনও তাঁরা দখল করে ফেললেন। সেখানে থাকা পাকিস্তানি সেনারাও বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখে তখন পালিয়ে গেল।
মধ্যরাতে পরিশ্রান্ত মুক্তিযোদ্ধারা কেউ ঘুমিয়ে, কেউ জেগে। হঠাত্ এল পুনঃসংগঠিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জোরালো পাল্টা আক্রমণ। মুক্তিযোদ্ধারা বিক্রমের সঙ্গে যুদ্ধ করেও আজমপুর রেলস্টেশনের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারলেন না। মুক্তিযোদ্ধারা এতে মনোবল হারালেন না। পরদিন পুনঃসংগঠিত হয়ে আক্রমণ চালালেন সেখানে। যুদ্ধের পর আবার দখল করলেন আজমপুর রেলস্টেশন। পাকিস্তানি সেনারা একেবারে পালিয়ে গেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ১ থেকে ৩ ডিসেম্বরের।
শহীদ উল্লাহ চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। তখন তাঁর পদবি ছিল ল্যান্স নায়েক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরে, পরে এস ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
পাঁচ বিভাগে ৪৮ ঘণ্টার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা
-
রাফায় হামলা বন্ধ না করলে সম্পর্কের অবনতি হবে: ইসরায়েলকে ইইউ
-
‘আমি বাংলাদেশের হয়েই খেলব, এটা নিশ্চিত’, প্রথম আলোকে বললেন হামজা চৌধুরী
-
বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম: নাবিক ইব্রাহিম
-
আমরা সামনে তাকাতে চাই, পেছনে নয়: ডোনাল্ড লু