বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
শহীদুল ইসলাম, বীর প্রতীক
গ্রাম সুখী পলাশপাড়া, গোপালপুর, টাঙ্গাইল। বর্তমান ঠিকানা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, মিরপুর, ঢাকা।
বাবা হেলাল উদ্দীন, মা সুধামণি। স্ত্রী মালা বেগম। তাঁদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ৪২৫।
মৃত্যু ২০০৫।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বভূষণ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শহীদুল ইসলাম সর্বকনিষ্ঠ। ১৯৭১ সালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। তিনি লালু নামে বেশি পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিবাহিনী ছাড়াও দেশের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি সশস্ত্র আঞ্চলিক বাহিনী গড়ে ওঠে। এর মধ্যে কাদেরিয়া বাহিনী অন্যতম। এ বাহিনীর একটি দলের সঙ্গে ছিলেন শহীদুল ইসলাম। শুরুতে তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতা, অস্ত্র-গোলাবারুদ বহন ও সংবাদ সংগ্রহের কাজ করতেন। পরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরায় অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন। দেশে ফেরার পর তাঁকে গোপালপুর থানা সদরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের আদ্যোপান্ত জানার জন্য সেখানে পাঠানো হয়। শহীদুল ইসলাম গোপালপুরে অবস্থান করে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাদেরিয়া বাহিনীর কয়েকটি দল গোপালপুরে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করে। শহীদুল ইসলামও এ যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি পাকিস্তানি ক্যাম্পে কয়েকটি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটান। এতে বেশ কজন পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী হতাহত হয়।
টাঙ্গাইলের অন্তর্গত একটি থানা গোপালপুর। জেলা সদর থেকে উত্তরে এবং জামালপুর জেলার সীমান্তে এর অবস্থান। ১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা গোপালপুরে পাকিস্তানি সেনা অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালালে দুই পক্ষে শুরু হয় প্রচণ্ড যুদ্ধ। যুদ্ধ চলার সময় ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল থেকে আরও পাকিস্তানি সেনা এসে নিজেদের ঘাঁটির শক্তি বৃদ্ধি করে। কমান্ডার আবদুল হাকিম, হুমায়ুন, তারা ও বেনুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ৮ অক্টোবর বিকেল পর্যন্ত যুদ্ধ করেন। কিন্তু থানার পতন ঘটাতে পারলেন না। এ ঘটনা কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অসম্মানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। মুক্তিযোদ্ধাদের মূল দলনেতা আবদুল হাকিম চিন্তা করতে থাকলেন পরবর্তী রণকৌশল নিয়ে।
এরপর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেন। এতে কিছুটা সাফল্য আসে। পাকিস্তানি সেনারা ঘাঁটির ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় এক দিন শহীদুল ইসলাম কাজের ছেলের ছদ্মবেশে পাকিস্তানি সেনাদের ঘাঁটিতে যান। তাদের বিভিন্ন ফাই-ফরমাশ খেটে আস্থা অর্জন করেন। পরে গ্রেনেডসহ ঘাঁটিতে প্রবেশ করে সেখানে গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরাপদে ফিরে আসেন। তাঁর এই দুঃসাহসিক অভিযানে পাকিস্তানি সেনা, তাদের সহযোগীসহ আটজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। এই সফল গ্রেনেড হামলার পর শহীদুল ইসলাম আরও কয়েকবার দূর থেকে সেখানে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। এতে পাকিস্তানি সেনারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। নভেম্বরের শেষ দিকে মুক্তিযোদ্ধারা আবার গোপালপুর আক্রমণ করেন। দু-তিন দিন যুদ্ধ চলে। এরপর পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এ যুদ্ধেও শহীদুল ইসলাম অংশ নেন। গোপালপুরের যুদ্ধ ছাড়াও কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তিন নম্বরে কে, নাজমুল না সাকিব
-
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
-
দরিদ্র মানুষের খাবারের ব্যয় বেড়েছে ৫৮ শতাংশ
-
১০০ মিটার দূরে, বাঁচানো গেল না স্ত্রী–সন্তান ও নাতি–নাতনিদের
-
দেড় শ টাকায় উঠেছে কাঁচা মরিচের কেজি