বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
শওকত আলী সরকার, বীর বিক্রম
গ্রাম দক্ষিণ ওয়ারী, ইউনিয়ন রানীগঞ্জ, উপজেলা চিলমারী, কুড়িগ্রাম। বর্তমান ঠিকানা চিলমারী থানাহাট বাজার।
বাবা ইজাব আলী সরকার, মা শরিতুজ নেছা।
তাঁর চার মেয়ে ও দুই ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ১৭২।
মুক্তিযোদ্ধারা দুপুরে এক দফা যুদ্ধ করলেন পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে। তাঁদের নেতৃত্বে শওকত আলী সরকার। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেও তাঁরা ব্যর্থ হন। অসম যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনারাই জয়ী হয়। শওকত আলী সরকার সহযোদ্ধাদের নিয়ে পিছু হটে সাময়িকভাবে আত্মগোপন করতে বাধ্য হন, কিন্তু দমে যাননি। বিকেলে পুনঃসংগঠিত ও শক্তি বৃদ্ধি করে আবার পাল্টা আক্রমণ চালান। এবার পাকিস্তানি সেনারা বিপর্যস্ত। শেষে পাকিস্তানি সেনারা তাদের হতাহত সহযোদ্ধাদের ফেলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনা ঘটে অনন্তপুরে ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে।
অনন্তপুর কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত। সেদিন ছিল বাংলা পৌষ মাসের ৫ বা ৬ তারিখ। বেলা ১১টার দিকে একদল পাকিস্তানি সেনা হঠাত্ হাতিয়া ইউনিয়নে আসে। তাদের নেতৃত্বে ছিল এক মেজর। পাকিস্তানি সেনারা সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে থাকে। হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুরে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের মূল শিবির।
মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁদের বেপরোয়া আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে ঝোপ-জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। চারদিকে তখন আহত গ্রামবাসীর চিত্কার। মৃত মানুষের রক্তে ভেসে গেছে গ্রাম। দুঃসহ এক পরিস্থিতি।
এ পরিস্থিতিতে শওকত আলী সরকার বেশিক্ষণ নীরব থাকতে পারলেন না। মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে আবার ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে। এবার তাঁরা সংখ্যায় কিছুটা বেশি। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দল—চাঁদ প্লাটুনের কিছু মুক্তিযোদ্ধা। গ্রামবাসী হত্যার প্রতিশোধ নিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শওকত আলী সরকার মুখোমুখি যুদ্ধ শুরু করেন। তাঁর সাহস দেখে উজ্জীবিত হন সব মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা বেসামাল হয়ে পড়ে। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস আরও বেড়ে যায়। বিপুল বিক্রমে তাঁরা যুদ্ধ করেন। একসময় শওকত আলী সরকারসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। কিন্তু তাঁদের হাতেও হতাহত হয় ২৫-৩০ জন পাকিস্তানি সেনা। শেষ পর্যন্ত নিহত কয়েকজনের লাশ ফেলে পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যায় কুড়িগ্রামে। সেদিন পাকিস্তানি সেনারা কয়েক শ নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করে। জীতেন্দ্র নাথ, গোলজার হোসেন, মনতাজ আলী, আবুল কাসেম কাচু, নওয়াব আলীসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে শহীদ হন।
শওকত আলী সরকার ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে যুদ্ধ করেন ১১ নম্বর সেক্টরের মানকারচর সাবসেক্টরে।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
ঢাকা শহরে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে না: সড়ক পরিবহনমন্ত্রী
-
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেমড সেলে না রাখার রায় স্থগিত
-
সার আত্মসাৎ মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ
-
বিশ্বকাপ দল, প্রত্যাশা ও প্রস্তুতি নিয়ে হাথুরুসিংহে ও নাজমুল যা বললেন
-
যমজ বোন হলেও নাচে তাঁরা ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী