বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
রশিদ আলী, বীর প্রতীক
গ্রাম সাইজগাঁও, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট।
বাবা মনসুর আলী, মা করিমুন নেছা। স্ত্রী হাওয়ারুন নেছা। তাঁদের দুই ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ২২৪।
শহীদ আগস্ট ১৯৭১।
রশিদ আলী মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন—এ কথা অনেক দিন তাঁর মা-বাবা, স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন জানতেন না। তাঁরা জানতেন, তিনি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করছেন। তারপর দেশ স্বাধীন হলো। তাঁরা সবাই রশিদের প্রতীক্ষায়। ১৪ দিন পর জানতে পারেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু এ খবর কেউ, বিশেষত তাঁর স্ত্রী বিশ্বাস করেননি। তাঁর সহযোদ্ধা ছিলেন একই এলাকার আমির হোসেন। তাঁরা দুজন একসঙ্গে ইপিআরে চাকরি করতেন। যুদ্ধও করেন একসঙ্গে। আমির হোসেনের কাছে শোনার পর তাঁরা বিশ্বাস করেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলার দক্ষিণ প্রান্তে জীবননগর উপজেলা। এর পাশে ধোপাখালী বিওপি দামুড়হুদা উপজেলার অন্তর্গত। ১৯৭১ সালে এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত একটি প্রতিরক্ষা অবস্থান। পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানটির কারণে মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে বাংলাদেশের ভেতরে এসে গেরিলা অপারেশন করতে পারছিলেন না। ফলে ওই এলাকায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলা অপারেশন স্তিমিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পাকিস্তানি সেনাদের সেখান থেকে বিতাড়ন বা তাদের পরিধি সীমিত করার জন্য নিয়মিত মুক্তিবাহিনী সেখানে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮ আগস্ট বানপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম মুস্তাফিজুর রহমানের (বীর বিক্রম, পরে জেনারেল ও সেনাপ্রধান) নেতৃত্বে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর একটি দল সেখানে আক্রমণ করে। দলটির বেশির ভাগই ইপিআর সদস্য। তাদের মধ্যে ছিলেন রশিদ আলী। সঙ্গে গণবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারাও ছিলেন। তাঁদের এই সম্মিলিত বাহিনী ধোপাখালী বিওপির কাছাকাছি পজিশন নিয়ে গুলিবর্ষণ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধার হাতে ছিল পুরোনো থ্রি নট থ্রি রাইফেল। মাত্র কয়েকজনের কাছে ছিল আধুনিক অস্ত্র। ফলে পাকিস্তানি সেনাদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের অনর্গল গুলিবর্ষণের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের মাথা তোলাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। রশিদ আলীসহ কয়েকজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা এ অবস্থার মধ্যেও যুদ্ধ করতে থাকেন। একপর্যায়ে হঠাৎ মেশিনগানের গুলি এসে লাগে রশিদ আলীর শরীরে। তাঁর জীবনপ্রদীপ নিভে যায়। সেদিন এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর রশিদ আলী, আবদুল গফুর (নোয়াখালী), আবু বাকের (যশোর), সিদ্দিক আলী ও আবদুল আজিজ (ঢাকা) শহীদ এবং চারজন গুরুতর আহত হন। মুক্তিযোদ্ধারা রশিদ আলীসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হন। পরে তাঁদের সমাহিত করা হয় বাংলাদেশের মাটিতেই।
রশিদ আলী ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের ৪ নম্বর উইংয়ে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাঁর ইউনিটের সঙ্গে যোগ দেন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন যশোরের বেনাপোল এলাকায় ও পরে বানপুর সাব-সেক্টরে।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
তিনি তো আমির হোসেন আমুর আইনজীবী নন
-
আমস্টারডামে ইসরায়েলি ফুটবল সমর্থকদের ওপর হামলা, দুই দেশের নেতাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
-
আসিফ নজরুলের সঙ্গে ‘অশোভন আচরণে’ তারেক রহমানের নিন্দা
-
আদাবরে স্কুলে ঢুকে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটে একজন গ্রেপ্তার
-
৪১ বছরেও বিচার শেষ হয়নি