বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মো. শাহজাহান ওমর, বীর উত্তম
গ্রাম রাজাপুর, উপজেলা রাজাপুর, ঝালকাঠি। বর্তমান ঠিকানা ৫৪ পার্ক রোড, বারিধারা, ঢাকা।
আবদুল হামিদ, মা লালমন বেগম।
স্ত্রী মেহজাবিন ফারজানা ওমর। তাঁদের এক মেয়ে ও এক ছেলে।
সনদ নম্বর ১৯।
১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বর। রাতে মো. শাহজাহান ওমরসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা নৌকাযোগে রওনা হন চাচৈরের উদ্দেশে। জায়গাটির অবস্থান ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায়। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি উপদলে বিভক্ত। তিনি তাঁদের সার্বিক নেতৃত্বে। ভোরে সবার আগে তিনি কয়েকজন সহযোদ্ধাসহ পৌঁছান চাচৈরের কাছে। পৌঁছেই তিনি খবর পান যে ওই এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এসেছে। তারা কয়েকটি বাড়িতে আগুন দিয়ে আশপাশেই অবস্থান নিয়েছে।
শাহজাহান ওমর সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। গর্জে ওঠে মুক্তিযোদ্ধা সবার অস্ত্র। থেমে থেমে সারা দিন ধরে যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর নেতৃত্বে বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করে চলেন। সন্ধ্যার পর পাকিস্তানি সেনারা বিপুল ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পিছু হটে যায়। কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে একজন (আউয়াল) শহীদ ও দু-তিনজন আহত হন।
পরদিন ১৪ নভেম্বর সকালে বরিশাল ও ঝালকাঠি থেকে নতুন সেনা এসে যোগ দেয় চাচৈরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আগের দলটির সঙ্গে। মো. শাহজাহান ওমর এতে বিচলিত হননি, মনোবলও হারাননি। সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসের সঙ্গে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালান। তাঁকে দেখে উজ্জীবিত হন অন্য সব সহযোদ্ধা।
ওমর পুরোভাগে থেকে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা বিপুল শক্তি নিয়েও তেমন সুবিধা করতে পারছিল না। ১৪ নভেম্বরও সারা দিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। শেষের দিকে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকে। খাল পার হতে গিয়ে আরও কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে প্রাণ হারায়।
সন্ধ্যার পর রাতের আঁধারে পাকিস্তানি সেনারা একেবারে পালিয়ে যায়। কয়েকজন মূল দলের সঙ্গে পালাতে না পেরে লুকিয়ে ছিল একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের খুঁজে বের করার পর আটক করে। এই যুদ্ধের সংবাদ তখন আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সেনাকর্মকর্তা মো. শাহজাহান ওমর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শিয়ালকোটে কর্মরত ছিলেন। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে যান এবং যুদ্ধে যোগ দেন। তাঁকে ৯ নম্বর সেক্টরের টাকি সাবসেক্টরের বরিশাল বেইজের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি বরিশাল এলাকায় একের পর এক পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের দিশেহারা করে তোলেন। চাচৈর যুদ্ধের কয়েক দিন পর রাজাপুরের যুদ্ধে তিনি আহত হন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পর ইরানের প্রেসিডেন্ট–পররাষ্ট্রমন্ত্রীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না
-
ইরানের মন্ত্রিসভার বৈঠক, তাবরিজ যাচ্ছেন শীর্ষ কর্তারা
-
ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হেলিকপ্টারে যাঁরা ছিলেন
-
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তথ্যে ৩০ শিশুর ‘যৌন নিপীড়ক’ শিক্ষক গ্রেপ্তার
-
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম ভারতে গিয়ে নিখোঁজ, ডিবিকে জানালেন মেয়ে