বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মো. বদিউল আলম, বীর বিক্রম
গ্রাম উত্তরপাড়া, উপজেলা পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ। বর্তমান ঠিকানা ৫৭ মণিপুরিপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
বাবা আবদুল বারী, মা রওশন আরা খানম। অবিবাহিত।
খেতাবের সনদ নম্বর ১৪৯। গেজেটে তাঁর নাম মোহাম্মদ বদি।
শহীদ ১৯৭১।
মো. বদিউল আলমের সহযোদ্ধা ছিলেন কাজী কামাল উদ্দীন (বীর বিক্রম)। তিনি লিখেছেন, ‘আমি জনা দশেক মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে যাচ্ছিলাম সিদ্ধিরগঞ্জে পাওয়ার স্টেশন কীভাবে উড়িয়ে দেওয়া যায়, সেটা সার্ভে করতে।
‘আমরা যখন পিরুলিয়া থেকে রওনা হলাম, তখন আকাশ মেঘলা ছিল। আমাদের দুই নৌকার একটিতে ছিলাম আমি, বদি, জুয়েল ও আরও দুজন। সবাইকে আমি স্টেনগান নামিয়ে রাখতে বলি। কিন্তু বদি তা করেনি, তাঁর কোলের ওপরই রেখে দিয়েছিল স্টেনগানটা। আমাদের নৌকা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে।
‘হঠাত্ই সামনে নৌকার মতো কিছু একটা দেখলাম। নৌকাটা আমাদের নৌকা দুটির দিকে এগিয়ে আসে। সর্বনাশ, ওই নৌকায় পাকিস্তানি মিলিটারি। বদি আমার নির্দেশের অপেক্ষায় থাকে না। স্টেনগান তুলে ব্রাশফায়ার করে। পুরো ম্যাগাজিন খালি করে দেয়। বদি পানিতে পড়ে গিয়েছিল। জুয়েলের ডান হাতের তিনটা আঙুল গুলিতে জখম হয়। আমরা সবাই একটা নৌকাতে ফিরেছিলাম।’
সিদ্ধিরগঞ্জের অপারেশন শেষ পর্যন্ত মো. বদিউল আলমরা করতে পারেননি। কয়েক দিন পর তাঁরা অপারেশন করেন ধানমন্ডিতে। এই অপারেশন করে তাঁরা বিখ্যাত হয়ে যান। কাজী কামালউদ্দীন লিখেছেন: ‘আমাদের একটা টার্গেট ছিল ধানমন্ডির পাকিস্তানি আর্মির একটা ক্যাম্প। আমরা সেখানে আক্রমণ করার পর অনেক সংঘর্ষ হলো। অপারেশন শেষে আমরা যাচ্ছিলাম আমাদের আস্তানার দিকে।
‘ধানমন্ডির ৪ কি ৫ নম্বর রোডে দুই দিকেই ছিল চেকপোস্ট। আমরা ঢুকে গেলাম চেকপোস্টের লাইনে। আস্তে আস্তে গাড়ি এগোতে থাকল। আমরা স্টেনগান নিয়ে প্রস্তুত। আলম গাড়ির স্পিড বাড়াতে থাকল। এর মধ্যে এক পাকিস্তানি সেপাই বলে উঠল, “রোকো, রোকো”। আমি ফায়ার শুরু করলাম। রুমী ফায়ার শুরু করে গাড়ির পেছনের কাচ ভেঙে। স্বপন ও বদি ডান দিকে ফায়ার করতে থাকে।’
মো. বদিউল আলম ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ ক্লাসের শিক্ষার্থী ছিলেন। একই সঙ্গে ছাত্ররাজনীতিও করতেন। তিনি যে ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেই সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করেন। কিন্তু ভারতে যাননি। মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরা প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকায় ফিরলে তিনি তাঁদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ক্র্যাক প্লাটুনের বেশির ভাগই ছিলেন তাঁর পরিচিত। ধানমন্ডির অপারেশনের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁকে আটক করে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। নির্যাতনে তিনি শহীদ হন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি: রাজনৈতিক সমঝোতায় সমাধান খুঁজছে সরকার
-
ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় দানা
-
উৎকৃষ্ট গণতন্ত্র চাইলে শুধু নির্বাচন দিলে হবে না
-
সাংবিধানিক পথে যাত্রা ভুল হলে সেটা এই আন্দোলনে থাকা সবার ভুল: আসিফ নজরুল
-
ছেলেদের লিগে মেয়েদের দল: ‘দুঃসাহসী’ রামসবটম ক্রিকেট ক্লাবের গল্প