বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মো. নূরুল হক, বীর প্রতীক
খাজা রোড, বাদামতলী, চাঁদগাঁও, চট্টগ্রাম।
বাবা শামসুল হুদা, মা মোস্তফা খাতুন।
স্ত্রী হোসনে আরা বেগম। তাঁদের দুই ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ২৯৬।
অপারেশনের আগে নৌ-কমান্ডোদের কয়েকজন মিলে মানত করলেন, তাঁরা মহসিন আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করবেন। মানতের খাসি কিনতে একাই গেলেন মো. নূরুল হক। যাওয়ার পথে তাঁর চোখে পড়ল পাকিস্তানি সেনাদের একটি জিপ একটি রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়িয়ে। মো. নূরুল হক মনে মনে ভাবলেন, তাঁর নাগালে এক লোভনীয় শিকার। এ শিকারকে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। ভাবামাত্র আর দেরি করলেন না। নিজের কাছে থাকা গ্রেনেড বের করে দাঁতের কামড়ে সেফটিপিন খুলে ছুড়ে দিলেন জিপ লক্ষ্য করে। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো সেটি।
লোকজন দিগ্বিদিক ছুটে পালাতে লাগল। গাড়িতে আগুন জ্বলছে, সামনের কাচ চূর্ণবিচূর্ণ। আরোহী সবাই আহত। একজনের এক হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আছে মাটিতে। মো. নূরুল হক আর দেরি করলেন না। দ্রুত মিশে গেলেন জনতার ভিড়ে। চট্টগ্রামের দেওয়ানহাটে এ ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭১ সালের মধ্য সেপ্টেম্বরে।
১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম নৌবন্দরে সফল অপারেশন শেষে মো. নূরুল হকসহ নৌ-কমান্ডোরা ফিরে গিয়েছিলেন ভারতে। কয়েক দিন পর তিনি আরও ১১ জন সঙ্গীসহ আবার চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। এবার কোনো সুনির্দিষ্ট টার্গেট ছিল না। কিন্তু তাঁরা বন্দরে পুনরায় অপারেশন করতে চাইলেন। এদিকে অপারেশন জ্যাকপটের পর বন্দরে প্রচণ্ড কড়াকড়ি। তাঁদের পক্ষে সেখানে অপারেশন করা দুঃসাধ্য। এ অবস্থায় তাঁদের দলনেতা বহির্নোঙরে অপারেশন করার ব্যাপারে উত্সাহী হয়ে উঠলেন। এর আগে একদিন নূরুল হক একাই দুঃসাহসিকভাবে ওই অপারেশন করেন। পরে বহির্নোঙরে অপারেশনেও তিনি অংশ নেন। কিন্তু তাঁদের সেই অপারেশন ব্যর্থ হয় মর্মান্তিক এক ঘটনার মধ্য দিয়ে।
নৌ-কমান্ডোরা রাতে ভাটার সময় সমুদ্রের পানিতে নেমে লক্ষ্যস্থলের দিকে যাত্রা শুরু করেন। অনেকক্ষণ সাঁতরেও তাঁরা সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। পরে জোয়ারের ধাক্কায় তাঁরা পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় সমুদ্রের তীরে পৌঁছান। তখন তাঁদের কারও জ্ঞান ছিল না। ১১ জনের মধ্যে চারজনের ভাগ্যে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। তাঁদের একজন ছিলেন মো. নূরুল হক। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের আটক করে ব্যাপক নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। নির্যাতনে একজন (মোহাম্মদ হোসেন বীর প্রতীক) শহীদ হন। মো. নূরুল হকসহ তিনজনকে পরে ঢাকা সেনানিবাসে পাঠানো হয়। সেখানেও তাঁদের ওপর চলে প্রচণ্ড নির্যাতন। স্বাধীনতার পর তাঁরা ছাড়া পান।
মো. নূরুল হক ১৯৭১ সালে ব্যবসা করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে চলে যান। পরে যোগ দেন মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডো দলে।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
ট্রাম্প ৯৯, কমলা ২৭
-
অভিনেত্রী শমী কায়সার গ্রেপ্তার
-
মার্চ-এপ্রিলে নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি শুরুর চিন্তা বিএনপির
-
চট্টগ্রামে ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে সংঘর্ষ, ফাঁকা গুলি, সাত পুলিশ সদস্য আহত
-
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ