বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মো. তবারক উল্লাহ, বীর প্রতীক
গ্রাম এখলাসপুর, উপজেলা মতলব, চাঁদপুর।
বাবা মো. বসরত আলী মাস্টার, মা রাবেয়া বেগম। স্ত্রী আলফাতুন নেছা। তাঁদের তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ১৭০।
মৃত্যু ২০০৪।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা বিপর্যস্ত। মুক্তিযোদ্ধা অনেকে শহীদ ও আহত। মো. তবারক উল্লাহ দমে গেলেন না। হাতেগোনা কয়েকজন সহযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে বীরবিক্রমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকলেন। একসময় তিনি একা হয়ে পড়লেন। তার পরও বিচলিত হলেন না। সাহসের সঙ্গে একাই পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে আপ্রাণ যুদ্ধ করতে থাকেন; কিন্তু বেশিক্ষণ পারলেন না। পাকিস্তানি সেনাদের ঘেরাওয়ে পড়ে গেলেন। এ ঘটনা ঘটে বালিয়াডাঙ্গায় ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
বালিয়াডাঙ্গার অদূরে হঠাত্গঞ্জে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান। সেখানে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল বালুচ রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি। ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আর্টিলারির সহায়তা নিয়ে মুক্তিবাহিনীর বালিয়াডাঙ্গার অবস্থানে পাল্টা আক্রমণ করে। মোহাম্মদ সফিক উল্লাহ ও মো. তবারক উল্লাহর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি আক্রমণ সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে থাকেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ ক্রমান্বয়ে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। ওই এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের উচ্ছেদ করার জন্য তারা বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণ করতে থাকে। প্রচণ্ড গোলাবর্ষণের মধ্যেও মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান ধরে রাখেন।
১৮ সেপ্টেম্বর মো. তবারক উল্লাহর অধিনায়ক আহত হলে সাময়িক সময়ের জন্য যুদ্ধের নেতৃত্ব এসে পড়ে তাঁর ওপর। যুদ্ধ চলতে থাকে। পরে অধিনায়ক হিসেবে যোগ দেন মাহাবুব উদ্দীন আহমেদ (বীর বিক্রম)। তিনিও যুদ্ধে আহত হন। মো. তবারক উল্লাহ সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন। প্রায় ৩৪ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণে শহীদ হন। অনেকে আহত হন। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। একপর্যায়ে তবারক উল্লাহ একা হয়ে যান। তখন তিনি একাই যুদ্ধ করছিলেন। পাকিস্তানি সেনারা তাঁর অজান্তে তাঁকে ঘিরে ফেলে। পরে আহত অবস্থায় তাঁকে পাকিস্তানি সেনারা আটক করে। আটক তবারক উল্লাহকে পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক নির্যাতন করার পর জেলে পাঠায়। ১৬ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান।
মো. তবারক উল্লাহ চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টরের অধীন কালীগঞ্জে। তখন তাঁর পদবি ছিল সুবেদার। তিনি একটি কোম্পানির অধিনায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে ৮ নম্বর সেক্টরের হাকিমপুর সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
অপেক্ষার পর খালি হাতে ফিরতে হয় অনেককে
-
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বন্ধে ট্রাম্পের পদক্ষেপ নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচল
-
নিবন্ধন নবায়ন নেই ৩৬ হাজার চিকিৎসকের
-
ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানালেন পুতিন
-
ক্রিকেট মাঠে মালদ্বীপের রেকর্ডেও ভাগ বসানোর পথে বাংলাদেশ