বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মো. গোলাম ইয়াকুব, বীর প্রতীক
গ্রাম নারানদিয়া, ইউনিয়ন নহাটা, মহম্মদপুর, মাগুরা।
বাবা জমিরউদ্দীন মোল্লা, মা সাজু বিবি। স্ত্রী শামছুন্নাহার। তাঁদের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ৩৮২।
মৃত্যু ২০০১।
মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার অন্তর্গত নহাটা। নহাটার পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে চলেছে নবগঙ্গা নদী। দক্ষিণে নড়াইল জেলা। তখন একটি কাঁচা রাস্তার মাধ্যমে নহাটার সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ ছিল। এই এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের কোনো স্থায়ী ঘাঁটি ছিল না। কিন্তু তারা নিয়মিত টহল দিত। ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট একদল পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার নৌকাযোগে নবগঙ্গা নদী দিয়ে নহাটায় আসবে, এ খবর মুক্তিযোদ্ধাদের দলনায়ক মো. গোলাম ইয়াকুব গুপ্তচরের মাধ্যমে আগেই পেয়ে যান। তিনি পাকিস্তানি সেনাদের অ্যামবুশ করার সিদ্ধান্ত নেন। মুক্তিযোদ্ধারা তখন সেই এলাকাতেই ছিলেন। ইয়াকুবের দলে ছিলেন ময়মনসিংহের অসীম সাহা, যশোরের দেলোয়ার ও গরিব হোসেন, মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার পরিতোষ প্রমুখ। তাঁদের কাছে ছিল সাতটি এসএলআর, একটি এসএমজি ও তিনটি রাইফেল।
গোলাম ইয়াকুব ও তাঁর সঙ্গীরা দ্রুত তৈরি হয়ে অবস্থান নিলেন নহাটা বাজারের পাশে পাকা স্কুল ভবনের ছাদ ও তহশিল অফিসে। এলাকাটা ফাঁকা। ঘাট পর্যন্ত দেখা যায়। স্থানীয় লোকজন নিরাপদ স্থানে সরে গেছে। একটু পর পাকিস্তানি সেনারা নৌকাযোগে এসে ঘাটে নামে। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার মিলে প্রায় ১০০ জন। গোলাম ইয়াকুবের দলে মাত্র ১১ জন। গোলাম ইয়াকুব আক্রমণের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা তাঁদের আওতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে সবার অস্ত্র। গুলির শব্দের মধ্যে তাদের আর্তচিৎকারও শোনা যেতে থাকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অনেক পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার। ঘটনার আকস্মিকতায় তারা হতবিহ্বল। পাকিস্তানি সেনারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিহত হয় তাদের ৩০ থেকে ৩৫ জন। পরে তারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করলে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে চলে যান।
এত ক্ষয়ক্ষতির পরও সেদিন পাকিস্তানি সেনারা সেখানেই থেকে যায়। পরদিন ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা আবার পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আকস্মিক আক্রমণ চালান। এই আক্রমণেও বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।
মো. গোলাম ইয়াকুব আনসার বাহিনীতে চাকরি করতেন। শুরুতে মাগুরায় প্রতিরোধযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। পরে ভারতে গিয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ নেন। মুক্তিবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র দলের নেতৃত্ব দিয়ে তাঁকে গেরিলা অপারেশন করার জন্য মাগুরা এলাকায় পাঠানো হয়। নহাটায় অ্যামবুশ করার দিন কয়েক পর মহম্মদপুর থানার জয়রামপুরে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ করেন। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অনেক অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
দুবাইয়ে বিশ্বের ধনকুবেরদের গোপন সম্পদের পাহাড়, কার কত
-
জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চার্লি চ্যাপলিনকেও হত্যা করতে চেয়েছিলেন খুনিরা
-
ঠেকানো যাচ্ছে না রিজার্ভের পতন
-
তিন বন্ধুর সিজিপিএ একই, যুক্তরাষ্ট্রে বৃত্তি নিয়ে পিএইচডির সুযোগও পেলেন একসঙ্গে
-
বৃষ্টির সঙ্গে পড়া শিলায় দূষণের নানা উপাদান