বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মো. ওসমান গনি, বীর প্রতীক
মিঠাপুকুর, পঞ্চগড় পৌরসভা, পঞ্চগড়।
বাবা আজিজুল হক। মা আফরিন নেছা। স্ত্রী নাসিম বানু। তাঁদের তিন মেয়ে ও দুই ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ১৬৮।
মৃত্যু ১৯৯৯।
মো. ওসমান গনি চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর ইপিআর সেক্টরের রংপুর (১৯ নম্বর) উইংয়ের অধীন চিলমারীতে। তাঁর পদবি ছিল সুবেদার। ছিলেন একটি কোম্পানির অধিনায়ক। ২৫ মার্চের দু-তিন দিন আগে সুবেদার মেজর হিসেবে তাঁর পদোন্নতি হয়। তাঁকে সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সে যেতে বলা হলেও তিনি চিলমারী থেকে রংপুর হয়ে দিনাজপুর রওনা হন।
২৯ মার্চ রাতে দিনাজপুর সেক্টরের বাঙালি ইপিআররা একযোগে বিদ্রোহ করে কাঞ্চনে সমবেত হন। ওসমান গনি পার্বতীপুর থেকে ৩০ মার্চ কাঞ্চনে পৌঁছে বিদ্রোহী ইপিআরদের সঙ্গে যোগ দেন। তাঁকে রিয়ার হেডকোয়ার্টার্সের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিরোধযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। দিনাজপুর শহরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কাঞ্চনের রিয়ার হেডকোয়ার্টারে কয়েকবার আক্রমণ করে। ওসমান গনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে এ আক্রমণ প্রতিহত করেন। তাঁর নেতৃত্ব ও পরিচালনায় ইপিআর সেনারা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
৩১ মার্চ দিনাজপুর শহর মুক্ত হয়। কয়েক দিন পর রংপুর ও সৈয়দপুর থেকে আগত পাকিস্তানি সেনারা দিনাজপুর শহরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁদের আক্রমণ করে। অব্যাহত আক্রমণের মুখে কাঞ্চনে অবস্থানরত ওসমান গনি ও তার সহযোদ্ধারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুই স্থানে যান। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।
১২ এপ্রিল ওসমান গনি তাঁর দলের সহযোদ্ধাদের নিয়ে বিরলে অবস্থান নেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে কয়েক দিন ধরে তাঁর দলের যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি সেনারা ভারী অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নিয়ে কয়েকবার তাঁদের আক্রমণ করে। ওসমান গনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। কিন্তু তাঁরা সেখানে টিকে থাকতে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে পশ্চাদপসরণ করে নানাবাড়ি নামক স্থানে অবস্থান নেন। দু-তিন দিন পর পাকিস্তানি সেনারা সেখানে আক্রমণ করে। তাঁরা পিছু হটে কিশোরীগঞ্জে যান।
২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরাট দল ওসমান গনির দলকে আক্রমণ করে। তখন তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালান। তাঁদের আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বেশ ক্ষতি হয়। এরপর পাকিস্তানি সেনারা ভারতীয় ভূখণ্ডে অনবরত শেলিং করতে থাকে। এতে জানমালের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তাঁকে সহযোদ্ধাসহ ভারতে যাওয়ার অনুরোধ করে। তখন তিনি বাধ্য হয়ে সহযোদ্ধাদের নিয়ে ভারতে চলে যান।
ভারতে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর ওসমান গনি ৬ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নেওয়া ছাত্র-যুবকদের মধ্যে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে যেতে ইচ্ছুক, তাঁদের মধ্য থেকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা বাছাই করেন এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ দেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
তারেক রহমানের গণসংবর্ধনাস্থলে সকালেই বিপুল নেতা–কর্মী, চলছে স্লোগান
-
তারেক রহমান ফিরছেন আজ, বিএনপির নতুন করে পথচলার সংকল্প
-
বাস, লঞ্চ, ট্রেন ভরে ঢাকায় নেতা-কর্মীরা, রাতেই ভিড় সংবর্ধনাস্থলে
-
যেখানে পানি খুঁজতে গিয়ে স্কুলের পথ হারিয়ে ফেলছে কিশোরীরা
-
শুভ বড়দিন আজ, গির্জাগুলো সেজেছে বর্ণাঢ্য সজ্জায়