বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মো. ইব্রাহিম খান, বীর প্রতীক
গ্রাম বরঙ্গাখোলা, সদর, মানিকগঞ্জ।
বাবা জমসের খান, মা আমাতুন বিবি। স্ত্রী খুরশিদা বেগম। তাঁদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ৩৩৪। গেজেটে নাম মো. ইব্রাহিম।
মৃত্যু ১৯৯১।
১৯৭১ সালের ২ নভেম্বরের। গভীর রাত (ঘড়ির কাঁটা অনুসারে ৩ নভেম্বর)। নিঃশব্দে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে সমবেত হলেন মো. ইব্রাহিম খানসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা। অদূরে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুেকন্দ্র।
মো. ইব্রাহিম খান ও তাঁর সহযোদ্ধাদের লক্ষ্য ওই বিদ্যুেকন্দ্র। তাঁরা সেখানে গেরিলা অপারেশন করবেন। বিদ্যুৎকেন্দ্র ওয়াচ টাওয়ারে সার্চ লাইট জ্বালানো। টাওয়ারে সতর্ক পাহারায় আছে পাকিস্তানি সেনা ও সহযোগীরা।
প্রায় দুঃসাধ্য এক মিশন। পাকিস্তানি সেনারা যদি টের পায়, তবে সব পরিকল্পনাই বানচাল হয়ে যাবে। সে জন্য মো. ইব্রাহিম খানসহ সবাই সতর্ক। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনা ও সহযোগীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি ও তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধা যেতে সক্ষম হলেন ট্রান্সফরমারের কাছে। বাকিরা থাকলেন তাঁদের নিরাপত্তায়।
ট্রান্সফরমার ধ্বংসের জন্য বানানো হয়েছে পিকে চার্জ। ট্রান্সফরমারের গায়ে সেটা লাগিয়ে সংযোগ করা হবে কর্ডেক্স। কর্ডেক্সের মাঝ-বরাবর ডেটোনেটর। সংযোগ তারে আগুন দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটবে বিস্ফোরণ। সফলতার সঙ্গেই সব কাজ শেষ হলো।
এবার নিরাপদে ফিরে যাওয়ার পালা। মো. ইব্রাহিম খান ও তাঁর সহযোদ্ধারা ফিরে যাচ্ছেন। তখনই ঘটল বিপত্তি। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল অনেক অস্ত্র। মো. ইব্রাহিম খান ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাল্টা গুলি করতে করতে দ্রুত পিছিয়ে যেতে থাকলেন। পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে গুলির পাশাপাশি হ্যান্ড গ্রেনেডও ছুড়তে থাকল। বিস্ফোরিত একটি হ্যান্ড গ্রেনেডের স্প্লিন্টার অলক্ষ্যে ছুটে এল মো. ইব্রাহিম খানের দিকে। আঘাত করল তাঁর মুখে। ছিটকে পড়লেন মাটিতে। তবে দ্রুত নিজেকে সামলে নিলেন। একজন সহযোদ্ধার সহযোগিতায় চলে গেলেন নিরাপদ স্থানে।
এ সময়ই বিদ্যুচ্চমকের মতো একঝলক আলো। তারপর পাকিস্তানি সেনাদের হতবাক করে দিয়ে একের পর এক ঘটতে লাগল বিকট বিস্ফোরণ। বাতাসে ট্রান্সফরমার কয়েলের পোড়া গন্ধ। রক্তাক্ত মো. ইব্রাহিম খান ভুলে গেলেন সব যন্ত্রণা।
সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশনে ধ্বংস হয় সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র চারটি ট্রান্সফরমার। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের অনেক অংশে বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আর মো. ইব্রাহিম খান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছোড়া গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন। তাঁর ডান চোখ নষ্ট ও চোয়ালের হাড় ভেঙে যায়।
মো. ইব্রাহিম খান ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুেকন্দ্রে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জুন মাসের মাঝামাঝি যুদ্ধে যোগ দেন। ২ নম্বর সেক্টরে প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্র্যাক প্লাটুনের অধীনে যুদ্ধ করেন। ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে তিনি অংশ নেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
তারেক রহমানের গণসংবর্ধনাস্থলে সকালেই বিপুল নেতা–কর্মী, চলছে স্লোগান
-
তারেক রহমান ফিরছেন আজ, বিএনপির নতুন করে পথচলার সংকল্প
-
বাস, লঞ্চ, ট্রেন ভরে ঢাকায় নেতা-কর্মীরা, রাতেই ভিড় সংবর্ধনাস্থলে
-
যেখানে পানি খুঁজতে গিয়ে স্কুলের পথ হারিয়ে ফেলছে কিশোরীরা
-
শুভ বড়দিন আজ, গির্জাগুলো সেজেছে বর্ণাঢ্য সজ্জায়