বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মো. আবু বকর, বীর বিক্রম
বাড়ি ৩, সড়ক ৯৬, গুলশান ২, ঢাকা।
বাবা আবু জাফর, মা আনোয়ারা খাতুন। অবিবাহিত।
খেতাবের সনদ নম্বর ১৫০।
শহীদ আগস্ট ১৯৭১।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধারা দুঃসাহসী বেশ কয়েকটি অপারেশন চালিয়ে দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এর মধ্যে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের (বর্তমানে রূপসী বাংলা) অপারেশন অন্যতম। তাঁরা এই হোটেলে দুবার অপারেশন চালান। প্রথম জুনে, দ্বিতীয়বার ১১ আগস্ট। দ্বিতীয় অপারেশনে অংশ নেন মো. আবু বকর। এই অপারেশনের মূল নায়ক ছিলেন তিনি ও আবদুস সামাদ (বীর প্রতীক)।
অপারেশন করার জন্য বকর ও সামাদ সুযোগ খুঁজছিলেন। কিন্তু প্রথম ঘটনার পর থেকে হোটেলে বসানো হয় কড়া পাহারা। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন, যে করেই হোক অপারেশন করতে হবে। শেষে একটা উপায়ও বের করলেন।
১১ আগস্ট বিকেলে গাড়িতে চেপে রওনা হন বকর, সামাদ, মায়া (মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, বীর বিক্রম) ও গাজী (গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীক)। হোটেলের গাড়ি পার্কিংয়ে পৌঁছে বকর ও সামাদ হোটেলের ভেতরে ঢোকেন। বাকি দুজন গাড়িতে স্টেনগান নিয়ে বসে থাকেন।
হোটেল লাউঞ্জে মূল দরজা দিয়ে না ঢুকে ‘সুইস এয়ারের’ অফিস কক্ষের দরজা দিয়ে তাঁরা যান। এ ব্যাপারে সহায়তা করেন ওই অফিসেরই একজন। ব্রিফকেস হাতে বকর প্রসাধনকক্ষের একেবারে কোনার কক্ষে ঢুকে দরজা আটকে দেন। সামাদ বাইরে থাকেন কাভার হিসেবে। ভেতরে বকর টাইম বোমা চালু করে ব্রিফকেস রাখেন কমোডের পেছনে। তারপর দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে রেখেই দেয়াল টপকে বেরিয়ে আসেন। দুজন সোজা চলে যান অপেক্ষমাণ গাড়ির কাছে। গাড়িতে ওঠামাত্র দ্রুত সেটি বেরিয়ে যায়।
ঠিক ৫৫ মিনিট পরই ঘটে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। হোটেলের লাউঞ্জ, শপিং আর্কেড ও আশপাশের কক্ষের কাচ টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ে। ছিটকে যায় দরজা, ভেঙে পড়ে কক্ষের ভেতরের ও লাউঞ্জের লাগোয়া দেয়াল। আহত হয় বেশ কয়েকজন। দুই দিন পর বিশ্ব সংবাদপত্রে রোমাঞ্চকর এই অপারেশনের খবর প্রকাশিত হয় বেশ গুরুত্বসহকারে।
মো. আবু বকর ১৯৭১ সালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী (তখন কায়েদে আযম) কলেজের বিএ ক্লাসের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অফিসার্স কোর্সে যোগদানের অপেক্ষায় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মে মাসে ভারতে যান। ভারতের মেলাঘরে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকায় বেশ কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে অংশ নেন। ইন্টারকন্টিনেন্টালের অপারেশনই ছিল তাঁর শেষ অপারেশন। এরপর ২৮ বা ২৯ আগস্ট পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁকে বাড়ি থেকে আটক করে। পরে টর্চার সেলে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
খালেদা জিয়ার জন্য জার্মানির প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে কাতার
-
জাতীয় চিড়িয়াখানার খাঁচা থেকে বেরিয়ে গেল সিংহী, দুই ঘণ্টা পরে নিয়ন্ত্রণে
-
চোখের সামনে সঙ্গীদের মেরে আমাদের ভয় দেখাত
-
হাসপাতালে শাশুড়ি খালেদা জিয়াকে দেখে ধানমন্ডিতে বাবার বাড়িতে জুবাইদা রহমান
-
চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করলেই খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে: মির্জা ফখরুল