বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মো. আবদুল হাকিম, বীর প্রতীক
গ্রাম মদনেরগাঁও, উপজেলা ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।
বাবা সোনা মিয়া পাটোয়ারী, মা সাহানারা বেগম।
স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। তাঁদের এক ছেলে ও তিন মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ২৭৪।
রাতের অন্ধকারে নদীতে নেমে পড়লেন মো. আবদুল হাকিম ও তাঁর দুই সহযোদ্ধা। তাঁদের বুকে গামছা দিয়ে বাঁধা লিমপেট মাইন। কোমরে ছুরি। সাঁতরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছালেন লক্ষ্যস্থলে। সফলতার সঙ্গে জাহাজের গায়ে মাইন লাগিয়ে সরে গেলেন নিরাপদ স্থানে। একটু পর বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো মাইন। বিধ্বস্ত জাহাজ ডুবতে থাকল পানিতে। এ ঘটনা লন্ডন ঘাটে ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ৩০ অক্টোবর।
লন্ডন ঘাট চাঁদপুর নৌবন্দরের অদূরে ডাকাতিয়া নদীতে। ১৯৭১ সালের ৩০ অক্টোবর সেখানে আমেরিকার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি লোরেম নোঙর করেছিল। তাতে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য খাদ্য ও সমরাস্ত্র। মুক্তিবাহিনীর একদল নৌ-কমান্ডো ওই সময় অবস্থান করছিলেন চাঁদপুরে। তাঁরা খবর পাওয়ামাত্র ওই জাহাজে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
নৌ-কমান্ডো মো. আবদুল হাকিমসহ ছিলেন ১৫-১৬ জন। তাঁরা লিমপেট মাইনসহ ওই রাতেই লন্ডন ঘাটের অপর পাড়ে ডব্লিউ রহমান জুটমিলের পাশে অবস্থান নেন। ওই সময় বন্দর এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিরাপত্তাব্যবস্থা অত্যন্ত জোরদার ছিল। রাতে বন্দরে সার্বক্ষণিক সার্চলাইটের আলো জ্বেলে রাখা হতো। বন্দরে থাকা জাহাজের আলোও জ্বালানো থাকত। নদীতে ছিল গানবোটের অনবরত টহল।
নৌ-কমান্ডোরা এর ভেতরেই অপারেশন করার জন্য সেখানে যান। মো. আবদুল হাকিম, মোমিনউল্লাহ পাটোয়ারীসহ তিনজন নদীতে নেমে ওই জাহাজে লিমপেট মাইন লাগাতে যান। বাকিরা নদীর পাড়ে তাঁদের নিরাপত্তায় থাকেন। মো. আবদুল হাকিম ও সহযোদ্ধারা বুকে মাইন বাঁধা অবস্থায় দীর্ঘপথ সাঁতরে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছান। তারপর নিজেদের কচুরিপানা দিয়ে আড়াল করে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাতে মাইন লাগান। মাইন লাগানোর পর তাঁরা দ্রুত সাঁতরে নিরাপদ স্থানে চলে যান। একটু পর তিনটি মাইন বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। শব্দে বন্দরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনা ও জাহাজের নাবিক ও সান্ত্রিরা হকচকিত হয়ে পড়ে।
মো. আবদুল হাকিম ও সহযোদ্ধাদের দুঃসাহসিক অভিযানে এমভি লোরেম বিধ্বস্ত হয়ে পানিতে নিমজ্জিত হয়। স্বাধীনতার পর অনেক বছর সেখান থেকে সেই জাহাজ অপসারণ করা হয়নি। সেটি নৌ-কমান্ডোদের দুর্ধর্ষ অভিযানের স্মৃতি বহন করে।
মো. আবদুল হাকিম চাকরি করতেন পাকিস্তানি নৌবাহিনীতে। কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। ছুটি শেষ হলে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য ঢাকা বিমানবন্দরে এসেও শেষ পর্যন্ত আর যাননি। বিমানবন্দর থেকে পালিয়ে যান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগ দেন তাতে। ভারতে যাওয়ার পর তাঁকে মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডো দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বেশ কয়েকটি অপারেশনে তিনি অংশ নেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
ট্রাম্প ৯৯, কমলা ২৭
-
অভিনেত্রী শমী কায়সার গ্রেপ্তার
-
মার্চ-এপ্রিলে নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি শুরুর চিন্তা বিএনপির
-
চট্টগ্রামে ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে সংঘর্ষ, ফাঁকা গুলি, সাত পুলিশ সদস্য আহত
-
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ