বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

মো. আবদুল মালেক, বীর বিক্রম

  • গ্রাম কড়িবাড়ি, মুরাদনগর, কুমিল্লা।

  • বাবা মো. ইছহাক, মা রহিমা খাতুন। স্ত্রী আছিয়া খাতুন। তাঁদের তিন মেয়ে ও তিন ছেলে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ১১০।

  • শহীদ ৬ এপ্রিল ১৯৭১।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত। রাজশাহী উপশহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে থাকা ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট রাজশাহী শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে ৪ নম্বর ইপিআর সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল রাজশাহী শহরে। এর দুটি উইং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এই সেক্টরের বাঙালি ইপিআর সদস্যরাও যুদ্ধে যোগ দেন। দুই উইংয়ের বাঙালি ইপিআর সদস্যদের বেশির ভাগ রওনা হন রাজশাহীতে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ উইংয়ে কর্মরত নায়েক মো. আবদুল মালেক ছিলেন তাঁদের একজন।

এ সময় গোদাগাড়ীতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের বাধা দেয়। আবদুল মালেক ও তাঁর সহযোদ্ধারা ২ এপ্রিলের মধ্যে শহরের উপকণ্ঠে সমবেত হন। এরপর তাঁরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে রাজশাহী শহরের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করেন। স্থানীয় ছাত্র-যুবকেরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। এ সময় পাকিস্তানি জঙ্গি বিমান মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে। ৬ এপ্রিল পর্যন্ত বিমান আক্রমণ অব্যাহত থাকে। আবদুল মালেক নিজ অবস্থানে থেকে প্রতিটি আক্রমণ প্রতিহত করেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে শহরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা উপশহরে সমবেত হয় এবং সেখানকার অবাঙালিদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদের প্রতিরক্ষা আরও জোরদার করে। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারা শহরের বেশির ভাগ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা উপশহরের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক প্রতিরোধ ভেদ করে তাঁরা অগ্রসর হতে পারেননি।

এ সময় আবদুল মালেক কয়েকজন সহযোদ্ধার সঙ্গে ছিলেন কোর্ট স্টেশনের কাছে। সেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দলের সঙ্গে তাঁদের যুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছোড়া গুলি ছুটে আসে তাঁর দিকে। শহীদ হন এই বীরযোদ্ধা।

মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ফসিউদ্দিনের (আবদুল মালেকের দলনেতা, তখন হাবিলদার) ১৯৭৪ সালের বয়ানে আছে, ‘...চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ১৮ মাইল দূরে গোদাগাড়ীতে (আমাদের) কিছুসংখ্যক লোক ডিফেন্স তৈরি করে। রাতে পাকিস্তানিরা আমাদের ওপর আক্রমণ চালায়। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলে। আমরা আস্তে আস্তে রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হতে থাকি। গোলাগুলি চলতেই থাকে।

‘রাজশাহীর কাছিয়াডাঙ্গাতে ক্যাপ্টেন গিয়াস (গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) নওগাঁ থেকে এসে আমাদের সঙ্গে মিলিত হন। সেই সময় আমাদের কোনো অফিসার না থাকায় তিনি নেতৃত্ব দেন। রাজশাহী কোর্ট স্টেশনের কাছে ডিফেন্সে থাকাকালীন আমাদের একজন নায়েক, আবদুল মালেক শহীদ হন। এরপর রাজশাহী সেনানিবাস দখলের জন্য সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়।’

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান