বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মো. আবদুল মান্নান, বীর বিক্রম
গ্রাম চান্দড়া, ইউনিয়ন গোপালপুর, উপজেলা আলফাডাঙ্গা, ফরিদপুর।
বাবা আবদুল লতিফ, মা আছিরননেসা। তাঁর দুই স্ত্রী; নূরুন নাহার বেগম ও জাহানারা বেগম। তাঁদের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ১৬৩। গেজেটে নাম এম এ মান্নান।
মৃত্যু ২০০৩।
১৫ ডিসেম্বর ভোর পাঁচটা। সূর্যের আলো তখনো উঁকি দেয়নি। এ সময় ঠাস ঠাস, দ্রিম দ্রিম শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা ভাটিয়াপাড়া এলাকা। মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে। গোপালগঞ্জ জেলার উত্তরে কাশিয়ানী উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে মধুমতী নদীর তীরে ভাটিয়াপাড়া। সেখানে আছে ওয়্যারলেস স্টেশন।
পাকিস্তানিদের এ ঘাঁটি ছিল বেশ সুরক্ষিত। আগেও মুক্তিযোদ্ধারা দু-তিনবার ওই ঘাঁটিটি আক্রমণ করেন। দুই ইঞ্চি মর্টার দিয়ে তাঁরা অনেক রকেট ছোড়েন। কিন্তু ক্যাম্পের কোনো ক্ষতি হয়নি। ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার পর পাকিস্তানিদের এ ক্যাম্পটি দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধারা। মো. আবদুল মান্নান (এম এ মান্নান) সহযোদ্ধাদের নিয়ে ১৫ ডিসেম্বর এ ঘাঁটিতে আক্রমণ করেন। তাঁরা প্রথমে ওই ক্যাম্প অবরোধ করেন। এর মধ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা ভাটিয়াপাড়ায় অবস্থানরত পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকে আক্রমণ চালান। পাকিস্তানিরাও পাল্টা আক্রমণ করে।
পরে বয়রা সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার (বীর বিক্রম, পরে কর্নেল) নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা সেখানে উপস্থিত হন। অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর একজন মেজরের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশত পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
মো. আবদুল মান্নান (জন্ম ১৯৪০) ১৯৭১ সালে ছোটখাটো ব্যবসা করতেন। রাজনীতিতেও জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাতে। ফরিদপুর জেলায় সর্বপ্রথম তাঁর নেতৃত্বে আলফাডাঙ্গার গোপালপুরে সুপরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খল মুক্তিসেনার একটি দল গড়ে ওঠে। বেশির ভাগ সময় তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে দেশের ভেতরে ছিলেন। আলফাডাঙ্গা, কাশিয়ানীসহ বিভিন্ন স্থানে সাহসের সঙ্গে গেরিলাযুদ্ধ করেন।
মো. আবদুল মান্নান স্বাধীনতার পর কয়েক মেয়াদে গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে তিনি মারা যান।
মো. আবদুল মান্নানের বড় ছেলে (প্রথম স্ত্রীর একমাত্র সন্তান) এম এ শওকত, দুই ভাই এম এ সোবহান ও এম এ মতিনও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ছেলে শওকত ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে ৩৬ জনের একটি দলের নেতৃত্ব দিয়ে দেশে আসার পথে যশোরের আড়পাড়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অ্যামবুশে পড়েন। যুদ্ধে শওকত শহীদ হন। শহীদ শওকতের স্মরণে ১৯৭২ সালে চান্দড়া গ্রামে স্থাপন করা হয় ‘শহীদ শওকত স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার তারিখ আরও পেছাচ্ছে
-
মেসিরা গ্রুপে পেয়েছেন আলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া ও জর্ডানকে, ব্রাজিলের গ্রুপে কারা দেখে নিন
-
চোখের সামনে সঙ্গীদের মেরে আমাদের ভয় দেখাত
-
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়ছে, তালিকায় থাকতে পারে ৩০টির বেশি দেশ
-
খালেদা জিয়ার জন্য জার্মানির প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে কাতার