বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মোহাম্মদ আবদুল মতিন, বীর প্রতীক
গ্রাম কাজলা, উপজেলা তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ। বর্তমান ঠিকানা ফ্ল্যাট-সি ৩, বাড়ি-১০০, সড়ক-৪, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা, চট্টগ্রাম।
বাবা আবদুল গনি, মা রওশন আরা বেগম।
স্ত্রী শওকত আরা বেগম। তাঁদের এক মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ০৩।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে সিলেটমুখী সড়কের ১৮ মাইল পরই মাধবপুর। হবিগঞ্জ জেলার (১৯৭১ সালে মহকুমা) অন্তর্গত। মুক্তিযুদ্ধকালে ২৮ এপ্রিল এখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর যে যুদ্ধ হয়, তাতে এই বাহিনীর একটি দলের নেতৃত্ব দেন মোহাম্মদ আবদুল মতিন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া দখলের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২১ এপ্রিল শাহবাজপুরের দিকে অগ্রসর হয়। জঙ্গি বিমানের অব্যাহত আক্রমণ এবং অবিরাম কামানের গোলাবর্ষণের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনারা নদীর তীর ধরে শাহবাজপুরে চলে আসে। মোহাম্মদ আবদুল মতিন সাহসের সঙ্গে সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন।
রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শাহবাজপুর দখল করে। তবে মোহাম্মদ আবদুল মতিনের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের যথেষ্ট দেরি করিয়ে দিতে সক্ষম হন। তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বেশ ক্ষয়ক্ষতিও করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে আর প্রতিরক্ষা অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব নয় বুঝতে পেরে আবদুল মতিন সহযোদ্ধাদের নিয়ে পিছিয়ে যান। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জগদীশপুর-ইটখোলা সড়কে নতুন করে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলেন। পরে কৈতরা গ্রামে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন।
২৮ এপ্রিল সকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আবদুল মতিনের প্রতিরক্ষা অবস্থানে ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে। তারা নির্বিচারে গোলাবর্ষণ করছিল। প্রাথমিক আক্রমণের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অগ্রগামী দল দুপুর ১২টার মধ্যে মাধবপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সব প্রতিরক্ষার সামনে পৌঁছে যায়।
প্রথমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রায় এক ব্যাটালিয়ন সেনা তিন দিক থেকে আক্রমণ চালায়। বাঁ পাশের দল মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রবর্তী দক্ষিণ ভাগের অবস্থান অর্থাত্ মোহাম্মদ আবদুল মতিনের প্রতিরক্ষাব্যূহের ওপর আক্রমণ চালায়। দ্বিতীয় দলটি মুক্তিবাহিনীর দুই প্রতিরক্ষাব্যূহের মাঝখান দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তৃতীয় দলটি মুক্তিবাহিনীর অপর প্রতিরক্ষাব্যূহের ওপর আক্রমণ চালায়।
পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আরেকটি ব্যাটালিয়ন এসে যুদ্ধে যোগ দেয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত দুই পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। সংকটময় এমন মুহূর্তে মোহাম্মদ আবদুল মতিন বিচলিত হননি। সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের যথোপযুক্ত জবাব দেন।
মোহাম্মদ আবদুল মতিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন। ১৯৭১-এ মার্চে ছুটিতে ছিলেন পৈতৃক বাড়িতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ময়মনসিংহে সমবেত দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক রূপ পেলে ৩ নম্বর সেক্টরের সিমনা সাবসেক্টরের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে এস ফোর্সের অধীন ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্রাভো কোম্পানির অধিনায়ক হন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
মা খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে তারেক রহমান
-
নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই: তারেক রহমান
-
তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: শফিকুল আলম
-
জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধছে এনসিপি, দাবি আবদুল কাদেরের
-
এমন বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যেই স্বপ্ন দেখেছি: তারেক রহমান