বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মোস্তফা কামাল, বীরশ্রেষ্ঠ
গ্রাম পশ্চিম হাজীপাড়া, উপজেলা দৌলতখান, ভোলা।
বাবা হাবিবুর রহমান, মা মালেকা বেগম। স্ত্রী পেয়ারা বেগম। তাঁদের এক সন্তান।
খেতাবের সনদ নম্বর ০৪।
শহীদ ১৮ এপ্রিল ১৯৭১।
মোস্তফা কামাল চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ২৭ মার্চ বিদ্রোহ করে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ করে আখাউড়ায় (গঙ্গাসাগর ও তাল শহর) প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন।
তাঁদের মূল প্রতিরক্ষা অবস্থানে যাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আকস্মিক আক্রমণ না করতে পারে, সে জন্য একাংশকে অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষা অবস্থানে পাঠানো হয়। এ দলে ছিলেন অসমসাহসী মোস্তফা কামাল। তাঁরা অবস্থান নেন দরুইন গ্রামে। তাঁদের প্রতিরক্ষা ছিল এক পুকুরপাড়ে। কামালের অবস্থান ছিল সর্বডানে। তাঁর কাছে ছিল এলএমজি।
১৬ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরাট দল আখাউড়ায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের জন্য কুমিল্লা-আখাউড়া রেলপথ ধরে অগ্রসর হতে থাকে। মোস্তফা কামাল ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। পরের দিন (১৭ এপ্রিল) সকালে তাঁদের সব উত্কণ্ঠা আর অপেক্ষার অবসান ঘটে। শুরু হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণ। ক্রমশ তা তীব্রতর হয়। এ সময় বৃষ্টিও শুরু হয়।
১৮ এপ্রিল মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও বর্ষণমুখর পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা দরুইন গ্রামের খুব কাছে পৌঁছে যায়। এর আগে পাকিস্তানি সেনাদের অপর একটি দল অন্য দিক আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভ্রান্ত করে। মোগড়াবাজার ও গঙ্গাসাগরে আক্রমণের মহড়া প্রদর্শন করে। কিন্তু প্রকৃত আক্রমণ শুরু হয় দুপুর ১২টায়, পশ্চিম দিক দিয়ে।
একদিকে তুমুল বৃষ্টি, অন্যদিকে শাণিত অপ্রত্যাশিত আক্রমণ। মোস্তফা কামালসহ অল্পসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়েন। তাঁদের পক্ষে অবস্থান ধরে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের দুই দিক ঘেরাও করে ফেলেছিল। ফলে তাঁরা সবাই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়েন।
এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের পশ্চাদপসরণ অথবা নিশ্চিত জীবন দেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন নিখুঁত কাভারিং ফায়ার। স্বেচ্ছায় ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজের দায়িত্ব নেন মোস্তফা কামাল। এরপর তিনি তাঁর এলএমজি দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর গুলি শুরু করেন। এ সুযোগে তাঁর সহযোদ্ধারা পেছনে নিরাপদ স্থানে যান।
কামালের ক্রমাগত গুলিবর্ষণে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। তাদের এগিয়ে আসার গতি কিছুটা মন্থর হয়ে পড়ে। মরিয়া পাকিস্তানিরা তাঁর অবস্থান চিহ্নিত করে সেখানে মেশিনগান দিয়ে গুলি এবং মর্টারের গোলা ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে তারা সফল হয়। তাঁর শরীরে বিদ্ধ হয় মেশিনগানের গুলি। গুরুতর আহত হন তিনি।
পাকিস্তানি সেনারা তাঁর ওপর চড়াও হয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে স্থানীয় গ্রামবাসী তাঁর মরদেহ সেখানেই সমাহিত করেন। তাঁর সমাধি চিহ্নিত।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য করার পক্ষে প্রস্তাব পাস
-
একসঙ্গে তিনজনের মৃত্যুতে গ্রামজুড়ে আতঙ্ক আর শোক
-
বাংলাদেশের আরেকটি অতৃপ্তির জয়
-
ভারত ও শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশ সফরে আসছেন ডোনাল্ড লু
-
স্করপিয়ন: যেভাবে সন্ধান পাওয়া গেল কুখ্যাত এক মানব পাচারকারীর