বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মোফাজ্জল হোসেন, বীর প্রতীক
গ্রাম বড়িকান্দি, উপজেলা নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
বাবা তোফাজ্জল হোসেন, মা জোবেদা বেগম। স্ত্রী কোহিনুর বেগম। তাঁর এক মেয়ে ও এক ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ২৭৬।
মৃত্যু ২০০৬।
অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মোফাজ্জল হোসেনসহ নৌ-মুক্তিযোদ্ধারা ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের কাছে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছান। তাঁরা আসেন সমুদ্রবন্দরে দুঃসাহসী এক অপারেশন করতে। ১৩ আগস্ট রেডিওর আকাশবাণী কেন্দ্রে পরিবেশিত হয় একটি গান— ‘আমি তোমায় শুনিয়েছিলাম যত গান’। এ গান শোনার পর দলনেতার নির্দেশে তাঁরা সবাই প্রস্তুত হন। পাকিস্তানিদের সতর্ক চোখ এড়িয়ে গোলাবারুদসহ শহর অতিক্রম করে পরদিন কর্ণফুলী নদীর তীরে পৌঁছান। এরপর নৌ-মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা অপেক্ষায় থাকেন আকাশবাণী বেতারকেন্দ্রে আরেকটি গান শোনার জন্য। গানটি সেদিনই বাজার কথা ছিল, কিন্তু তা বাজেনি। ১৫ আগস্ট সকালে গানটি বাজে। ‘আমার পুতুল আজকে যাবে শ্বশুরবাড়ি’। দলনেতা সহযোদ্ধাদের জানান ওই রাতেই হবে অপারেশন।
এরপর মোফাজ্জল হোসেনসহ নৌ-মুক্তিযোদ্ধারা চরম উত্কণ্ঠায় সময় কাটান। তাঁদের স্নায়ুচাপ বেড়ে যায়। কারণ, ওই রাতই হয়তো তাঁদের জীবনে শেষ রাত। আগামীকালের সকাল হয়তো কারও জীবনে আর আসবে না। এভাবে ১৫ তারিখের সূর্য বিদায় নেয়। অন্ধকার নেমে আসে নৌ-মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন শিবিরে। তাঁরা দ্রুত প্রস্তুত হন।
বর্ষণমুখর রাত। গাঢ় অন্ধকার। মোফাজ্জল হোসেনসহ মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে বিভক্ত হয়ে রওনা হন। রাত আনুমানিক একটায় কর্ণফুলী নদীর পানিতে নেমে সাঁতার কেটে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকেন তাঁরা লক্ষ্যের দিকে। জাহাজসহ নানা জলযানে মাইন লাগিয়ে আবার ফিরে আসতে থাকেন। রাত আনুমানিক দুইটা ১৫ মিনিট। হঠাত্ কানফাটা আওয়াজে কেঁপে ওঠে গোটা নগর। একের পর এক বিস্ফোরণ। বন্দরে থাকা পাকিস্তানিরা ছোটাছুটি শুরু করে। কী ঘটেছে তারা কেউ জানে না।
মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিবাহিনীর নৌ-মুক্তিযোদ্ধারা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনায় ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম, খুলনাসহ আরও কয়েকটি নৌবন্দরে একযোগে কয়েকটি সফল অপারেশন পরিচালনা করেন। এতে পাকিস্তানি সরকারের ভিত কেঁপে ওঠে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হইচই পড়ে। এর সাংকেতিক নাম ছিল ‘অপারেশন জ্যাকপট’।
মোফাজ্জল হোসেন চাকরি করতেন পাকিস্তানি নৌবাহিনীতে। কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানে (তখন পশ্চিম পাকিস্তানি)। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ছুটিতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। ভারতে যাওয়ার কিছুদিন পর তিনি মুক্তিবাহিনীর নৌ-দলে অন্তর্ভুক্ত হন।
জ্যাকপট অপারেশন করার পর নৌ-মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরে যান। কিছুদিন পর তাঁরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে আবার বাংলাদেশে রওনা হন। এবার আগের মতো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ছিল না। কোনো নির্দিষ্ট এলাকা বা সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে জুবাইদা রহমান
-
শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলে রোববার খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়া হবে
-
মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি স্বজনদের কথা
-
ক্ষমতার প্রতি মোহমুক্ত একজন নেলসন ম্যান্ডেলা
-
পপি বীজ, প্রসাধনীর চালান জব্দ করাতেই কি দুই কাস্টমস কর্মকর্তার ওপর হামলা