বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, বীর বিক্রম
ধাপ, সদর, রংপুর। বর্তমান ঠিকানা বাসা ১৪৯, সড়ক ৪, নতুন ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা।
বাবা আবদুস সাত্তার, মা জরিনা খাতুন। স্ত্রী রাশিদা রহমান। তাঁদের তিন মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ০৯।
মৃত্যু ২০০৮।
চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার অন্তর্গত ধোপাখালী সীমান্ত এলাকা। রণকৌশলগতভাবে ১৯৭১ সালে ধোপাখালী ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এখানে অনেকবার খণ্ড ও গেরিলাযুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিন্যাস, জনবল ও অস্ত্রশক্তি ইত্যাদি নিরূপণের জন্য মুক্তি ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ নভেম্বর মুক্তি ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে ধোপাখালীতে আক্রমণ করে। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দেন মুস্তাফিজুর রহমান।
মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর নেতৃত্বে ভারতের বানপুর থেকে রাত আটটায় ধোপাখালীর উদ্দেশে রওনা হন। গভীর রাতে কাছাকাছি পৌঁছে তাঁরা কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হন। নিঃশব্দে অবস্থান নেন পাকিস্তানি ঘাঁটির ২০-২৫ গজের মধ্যে। নির্ধারিত সময়ে একযোগে আক্রমণ শুরু করেন। পাকিস্তানি ঘাঁটিতে ছিল মর্টার, মেশিনগানসহ অন্যান্য ভারী অস্ত্র। এ ছাড়া কাছাকাছি ছিল পকিস্তানি সেনাদের একটি আর্টিলারি ব্যাটারি। প্রথমে তারা তিনটি মেশিনগান দিয়ে পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করে। এরপর শুরু হয় আর্টিলারি মর্টার ফায়ার। সেদিনই তারা সেখানে প্রথম আর্টিলারি ব্যবহার করে। মুস্তাফিজুর রহমান সহযোদ্ধাদের নিয়ে এই পাকিস্তানি আক্রমণ মোকাবিলা করেন। তাঁর অদম্য মনোবল ও সাহস সহযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করে। তাঁদের প্রবল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধের একপর্যায়ে রাত দুইটার দিকে মুস্তাফিজুর রহমান আহত হন। তাঁর পেটে গুলি লাগে। আহত হওয়ার পর সহযোদ্ধারা তাঁকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে যুদ্ধক্ষেত্রেই থেকে যান। প্রাথমিক চিকিত্সা নিয়ে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। সারা রাত যুদ্ধের পর সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে পাকিস্তানি সেনারা রণে ভঙ্গ দেয়। তখন মুস্তাফিজুর রহমান ভারতীয় ভূখণ্ডের ক্যাম্পে ফিরে যান। এরপর চিকিত্সার জন্য তাঁকে কৃষ্ণনগরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোর ফিল্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সেদিন এই যুদ্ধে ১৯-২০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও অনেকে আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে তিনিসহ কয়েকজন আহত হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এই বিপর্যয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল দারুণভাবে বৃদ্ধি পায়।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৭১ সালে ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। তখন তাঁর পদবি ছিল ক্যাপ্টেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা থেকে পালিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। ৮ নম্বর সেক্টরের বানপুর সাবসেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সাবসেক্টরের আওতাধীন এলাকার বিভিন্ন জায়গায় তিনি যুদ্ধ করেন। বেশির ভাগ যুদ্ধেই তিনি অগ্রভাগে থাকতেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
নাটক, গান, চিত্রকলা বন্ধ হলে কী থাকে: মামুনুর রশীদ
-
আসিফ নজরুলকে হেনস্তার প্রতিবাদে মশালমিছিল
-
ইসলাম-বৌদ্ধ-হিন্দু-খ্রিষ্টান, সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই: সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান
-
৫ আগস্টের পর আরেকটি বিপ্লব হবে, সেটি হবে ইসলামি বিপ্লব: গোলাম পরওয়ার
-
সংখ্যালঘুরা শঙ্কিত, এর অবসান দরকার