বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

মিজানুর রহমান, বীর প্রতীক

  • গ্রাম বাউচাইল, ইউনিয়ন রতনপুর, উপজেলা নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

  • বাবা মো. আবদুল খালেক খান, মা মাহফুজা খানম।

  • স্ত্রী নূরজাহান খানম। তাঁদের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ১০৪।

মিজানুর রহমান

মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত। তাঁরা অবস্থান নিচ্ছেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের কাছে। একটি দলে আছেন মিজানুর রহমান। তিনি একটি উপদলের (প্লাটুন) দলনেতা। তাঁদের সবার মধ্যে টানটান উত্তেজনা। হঠাত্ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আক্রমণ করল। বিপুল বিক্রমে তাঁরাও পাল্টা আক্রমণ চালালেন। শুরু হয়ে গেল প্রচণ্ড যুদ্ধ। গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। রক্তক্ষয়ী সম্মুখযুদ্ধে তাঁর চোখের সামনে হতাহত হলেন কয়েকজন সহযোদ্ধা। মিজানুর রহমান দমে গেলেন না। সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলেন। একটানা কয়েক দিন চলা যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত তাঁরাই জয়ী হলেন। এ ঘটনা আখাউড়ায় ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটের মধ্যে রেল যোগাযোগের জন্য আখাউড়া ছিল গুরুত্বপূর্ণ এক স্টেশন। আখাউড়ার কাছেই ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তবর্তী শহর আগরতলা। ১৯৭১ সালে আখাউড়ায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্তিশালী এক প্রতিরক্ষা অবস্থান।

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে আখাউড়া দখলের জন্য মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সেখানে সমবেত হয়। যৌথ বাহিনীর পরিকল্পনা ছিল মুক্তিবাহিনীর এস ফোর্স ও মিত্রবাহিনীর মাউন্টেন ডিভিশন তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে আখাউড়া দখলের। মুক্তিবাহিনীর এস ফোর্স এবং ৩ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা উত্তর দিক থেকে আখাউড়ার দিকে অগ্রসর হন। এস ফোর্সের বি কোম্পানির একটি প্লাটুনের নেতৃত্বে ছিলেন মিজানুর রহমান।

মুক্তিযোদ্ধারা ১ ডিসেম্বর আখাউড়ার কাছে সমবেত হওয়ামাত্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁদের ওপর প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ শুরু করে; বিমান হামলাও চালায়। এতে মুক্তিযোদ্ধারা দমে যাননি। তাঁরা নিজ নিজ অবস্থানে মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন।

৩ ডিসেম্বর সকাল থেকে মিজানুর রহমান ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাল্টা অভিযান শুরু করেন। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর তাঁরা আখাউড়ার বিরাট এলাকা দখল করতে সক্ষম হন। আখাউড়ায় ৫ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত যুদ্ধ হয়। এরপর গোটা আখাউড়া মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসে।

৩ ডিসেম্বরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মিজানুর রহমানের দলনেতা (কোম্পানি অধিনায়ক) লেফটেন্যান্ট বদিউজ্জামানসহ আট-নয়জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ২০ জন গুরুতর আহত হন। পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে ১৯-২০ জন নিহত ও অসংখ্য আহত হয়। অনেকে আত্মসমর্পণ করে।

মিজানুর রহমান চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বি কোম্পানিতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকায় যুদ্ধ করেন। পরে ৩ নম্বর সেক্টর (আশ্রমবাড়ী-বাঘাইছড়ি সাবসেক্টর) এবং এস ফোর্সের অধীনে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান