বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মাহবুবুর রহমান, বীর উত্তম
ঈদগাহ বস্তি, দিনাজপুর।
বাবা এ এম তাছিরউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, মা জরিনা খাতুন। অবিবাহিত।
খেতাবের সনদ নম্বর ২৩।
শহীদ ২৬ নভেম্বর ১৯৭১।
ভোর হয় হয়, এ সময় সেখানে গোলাগুলির শব্দ। নিমেষে শান্ত এলাকা পরিণত হলো রণক্ষেত্রে। গোটা এলাকা প্রচণ্ড গোলাগুলিতে প্রকম্পিত। গোলাগুলির শব্দ শুনে মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক মাহবুবুর রহমান দ্রুত উঠে পড়েছেন। তিনি বিচলিত হলেন না। যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে থাকলেন। তাঁর দলের ওপর আক্রমণ করেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
১৯৭১ সালের নভেম্বরের মধ্যভাগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রধান সম্মুখ প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল কানাইঘাটে। এর অগ্রবর্তী এলাকা জকিগঞ্জ, আটগ্রাম ও চারগ্রাম তখন মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। আটগ্রাম-চরখাই-সিলেট অক্ষের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য কানাইঘাট দখলে রাখা ছিল যেকোনো পক্ষের জন্য অপরিহার্য। সেখানে প্রতিরক্ষায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানি ও পশ্চিম পাকিস্তানি স্কাউটস দলের একটি প্লাটুন এবং কিছুসংখ্যক রাজাকার। এ ছাড়া কাছাকাছি ছিল তাদের একটি আর্টিলারি ব্যাটারি।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে সিলেট অভিমুখে অভিযান শুরু করে। ১৫ নভেম্বর তারা প্রথমে চারগ্রাম এবং পরে জকিগঞ্জ দখল করে। এরপর আবার চারগ্রামে ফিরে গিয়ে পুনঃসংগঠিত হয়ে কানাইঘাটের দিকে অগ্রসর হয়। মুক্তিযোদ্ধারা সুরমা নদীর উত্তর তীর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন। নভেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহে কানাইঘাটের দুই মাইল দূরে গৌরীপুরে পৌঁছান। সেখানে তাঁরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে একদল (আলফা ও ব্রাভো কোম্পানি) সুরমা নদীর উত্তর তীরে এবং অপর দল (চার্লি ও ডেল্টা কোম্পানি) দক্ষিণ তীরে অবস্থান নেয়।
২৬ নভেম্বর ভোরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের মূল ডিফেন্সিভ পজিশন ছেড়ে পূর্ণ শক্তিতে অগ্রসর হয়ে আকস্মিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। এতে তাঁদের আলফা কোম্পানি নাজুক অবস্থায় পড়ে যায়। এই কোম্পানির অধিনায়ক ছিলেন মাহবুবুর রহমান। ওই অবস্থায় পাল্টা আক্রমণ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে না। তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে অত্যন্ত সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে তা-ই করতে থাকেন। কিন্তু প্রচণ্ড যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছোড়া গুলি এসে লাগে তাঁর শরীরে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি শহীদ হন। এ যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারাই জয়ী হন।
মাহবুবুর রহমান চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ফ্রন্টিয়ার ফোর্সে। ১৯৭১ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে ছিলেন। তখন তাঁর পদবি ছিল লেফটেন্যান্ট। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৯ মার্চ সেনানিবাস থেকে পালিয়ে তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যাওয়ার পর তাঁকে ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি দিয়ে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানির অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জামালপুর জেলার কামালপুরসহ আরও কয়েকটি যুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
কিরগিজস্তানে বিদেশিদের ওপর হামলা, আতঙ্কে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
-
ময়নাতদন্তে হত্যাকাণ্ড, পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে আত্মহত্যা
-
বাইডেনকে খোঁচা দিলেন ট্রাম্প, চাইলেন মাদক পরীক্ষা
-
ডিবিতে কেন গেলেন জানালেন মামুনুল হক
-
মাহমুদউল্লাহ ‘স্পিরিট অব দ্য টিম’, সাকিব ‘কিংবদন্তি’, রিশাদ ‘বিরল’