বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মমিনুল হক ভূঁইয়া, বীর প্রতীক
গ্রাম কালা সাদাধিয়া (ভূঁইয়াবাড়ি), দাউদকান্দি উপজেলা, কুমিল্লা।
বাবা সিরাজুল হক ভূঁইয়া। স্ত্রী সুফিয়া খাতুন। তাঁদের ছয় মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ৩৩৩।
মৃত্যু ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে শীতের রাতে নিঃশব্দে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে সমবেত হন মমিনুল হক ভূঁইয়াসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের লক্ষ্য সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুেকন্দ্র। তাঁরা সমবেত হয়েছিলেন ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের বর্তমান কাঁচপুর সেতুর কাছে। তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল কেবল বিদ্যুৎকেন্দ্র ট্রান্সফরমার বিস্ফোরকের সাহায্যে ধ্বংস করে সটকে পড়া। কেন্দ্রের চারদিকে ছিল ওয়াচ টাওয়ার। এখানে সব সময় সতর্ক প্রহরায় ছিল পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা। রাতে সার্চলাইটের আলোয় নদীসহ চারদিক আলোকিত করে রাখা হতো।
প্রায় দুঃসাধ্য এক মিশন ছিল এটি। পাকিস্তানি সেনারা টের পেলে মুক্তিযোদ্ধাদের সব পরিকল্পনাই বানচাল হয়ে যেত। সে জন্য মমিনুল হক ভূঁইয়া ও তাঁর সহযোদ্ধারা সবাই ছিলেন সতর্ক। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাদের ফাঁকি দিয়ে তিনি ও তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধা কেন্দ্রের ভেতরে ট্রান্সফরমারের কাছে যেতে সক্ষম হন। বাকি ব্যক্তিরা বাইরে থাকেন তাঁদের নিরাপত্তায়।
তাঁরা নিয়ে গিয়েছিলেন পিকে চার্জ। সেগুলো ট্রান্সফরমারের গায়ে লাগিয়ে তাঁরা কর্ডেক্স (সংযোগ তার) লাগান। কর্ডের মাঝ বরাবর ছিল ডেটোনেটর। সফলতার সঙ্গেই সব কাজ তাঁরা শেষ করেন। সংযোগ তারে আগুন দেওয়ার কয়েক মিনিট পর বিদ্যুচ্চমকের মতো এক ঝলক আলো দেখা যায়। প্রহরারত পাকিস্তানিদের হতবাক করে দিয়ে একের পর এক ঘটে বিস্ফোরণ।
তারপর চারদিক নিকষ অন্ধকারে ছেয়ে যায়। বাতাসে ভাসতে থাকে ট্রান্সফরমার কয়েলের পোড়া গন্ধ। সেদিন তাঁদের অপারেশনে ধ্বংস হয় সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র চারটি ট্রান্সফরমার। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের অনেক অংশে বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
ট্রান্সফরমারে বিস্ফোরক লাগিয়ে মমিনুল হক ভূঁইয়া ও তাঁর সহযোদ্ধারা ফিরে যাওয়ার সময় পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে যায়। তখন গর্জে ওঠে অনেক অস্ত্র। তাঁরা পাল্টা গুলি করতে করতে দ্রুত নিরাপদ স্থানে যান।
পাকিস্তানিরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলির পাশাপাশি গ্রেনেড ছোড়ে। গুলিতে কেউ আহত হননি। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে তাঁর তিন-চারজন সহযোদ্ধা আহত হন। একজন ছাড়া বাকি সহযোদ্ধাদের আঘাত তেমন গুরুতর ছিল না।
মমিনুল হক ভূঁইয়া ১৯৭১ সালে চাকরি করতেন বিদ্যুত্ বিভাগে। কুমিল্লা বিদ্যুত্ সরবরাহ কেন্দ্রে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাতে। কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
প্রতিরোধযুদ্ধের পর ভারতে যান। প্রথমে মুক্তিবাহিনীর ২ নম্বর সেক্টরে সাংগঠনিক নানা কাজে যুক্ত ছিলেন। পরে গেরিলা বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হন। কুমিল্লার দাউদকান্দি এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, বৈদ্যেরবাজার, সিদ্ধিরগঞ্জসহ আরও কয়েক স্থানে বেশ কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে তিনি অংশ নেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
পৃথিবীর কোন দেশে সেন্ট্রাল ব্যাংকে ঢুকতে পারছে অবাধে: ওবায়দুল কাদের
-
পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসনে হাজার কোটি টাকা বাড়তি চায় চীনা ঠিকাদার
-
রাঙামাটিতে এলোপাতাড়ি গুলিতে ইউপিডিএফের কর্মীসহ দুজন নিহত
-
বিশ্বের সেরা এয়ারলাইনস আট মাসের বেতনের সমান বোনাস দিচ্ছে
-
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজের ভেন্যুতে ঝড় বয়ে গেছে