বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মতিউর রহমান, বীর প্রতীক
গ্রাম চরমল্লিকপুর, ইউনিয়ন মল্লিকপুর, লোহাগড়া, নড়াইল। বর্তমান ঠিকানা মিরপুর, ঢাকা।
বাবা আবদুল কাদের মৃধা, মা মেহেরুন নেছা।
স্ত্রী ইসরাত জাহান সালমা। তাঁদের চার ছেলে ও দুই মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ১২২।
১৯৭১সালের ১৪ এপ্রিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার গঙ্গাসাগর এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান নিয়েছে মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি ছোট ছোট দল। এ রকমই একটি দলে ছিলেন মতিউর রহমান। তাঁর দলের অবস্থান এলাকার দক্ষিণ পারে। তাঁদের ডানে রেললাইন, কাছেই তিতাস নদ। পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান মোগরাবাজারে। মাঝখানে ব্যবধান দেড়-দুই শ গজ। পরদিন খুব ভোরে সেখানে যুদ্ধ শুরু হয়, থেমে থেমে কয়েক দিন চলে।
১৭ কি ১৮ এপ্রিল, তুমুল বৃষ্টির তোড়ে প্রকৃতির সবকিছু ভেসে যাওয়ার জোগাড়। এর মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা দক্ষিণ দিক থেকে তাঁদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিরতিহীন আক্রমণ চালাতে থাকে। বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণ হচ্ছিল। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের বিভ্রান্ত করার জন্যই সেদিক থেকে প্রথম আক্রমণ শুরু করে। তাদের আসল আক্রমণ শুরু হয় পশ্চিম দিক থেকে। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে অপ্রত্যাশিত এই আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ নাজুক অবস্থায় পড়েন। অবস্থান ধরে রাখা তাঁদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
এদিকে মুক্তিবাহিনীর অপর দলটি—যারা তাঁদের পেছনে ছিল—অধিনায়কের নির্দেশে পশ্চাদপসরণ করে। তাঁরা যে পিছিয়ে গেছে, এ খবর মতিউর রহমান ও তাঁর দলের কেউ বুঝতে পারেননি। এখন তাঁদের সমর্থন দেওয়ার জন্য আর কেউ নেই। পেছন থেকে বাধা না পাওয়ায় পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের দুদিক থেকে ঘিরে ফেলে।
মুক্তিবাহিনীর অন্য দলগুলো পিছিয়ে যাওয়ায় সবদিক দিয়েই মতিউর রহমানের দল খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। তাঁদের গোলাবারুদ ও খাদ্যের স্বল্পতাও ছিল। তাঁরা দুদিন প্রায় না খেয়ে যুদ্ধ করেছেন। পিছিয়ে যাওয়া বা আত্মাহুতি—তাঁদের সামনে আর পথ নেই। পিছিয়ে গেলেও সবার মারা পড়ার আশঙ্কা। পিছিয়ে যেতে হলে নিখুঁত কাভারিং ফায়ার দরকার। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন, সবাই একসঙ্গে হাওরের ভেতর দিয়ে পিছিয়ে যাবেন। কিন্তু সহযোদ্ধা মোস্তফা কামাল (বীরশ্রেষ্ঠ) বললেন, তিনিই কাভারিং ফায়ার করবেন। বাকি সবাই প্রতিবাদ করলেন। মোস্তফা কামাল তাঁর সিদ্ধান্তে অটল। তাঁর বীরত্বের কারণে সেদিন মতিউর রহমানের দল বেঁচে যায়।
এর আগে ৭ এপ্রিল মেঘনা নদীতে মতিউর রহমান এবং সহযোদ্ধারা শত্রুর ছোট একটি জাহাজ গোলার আঘাতে ডুবিয়ে দেন। একটি যুদ্ধে তিনি আহত হন।
মতিউর রহমান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কমান্ডো ফোর্সের সেনা ছিলেন। ছুটিতে থাকাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। তিনি ১ এপ্রিল চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সি কোম্পানিতে যোগ দেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
প্রত্যাবর্তনের এক অভূতপূর্ব দৃশ্য
-
আই হ্যাভ আ প্ল্যান: তারেক রহমান
-
তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে কী বললেন নাহিদ, আখতার, হাসনাত ও সারজিস
-
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর, ‘সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী’ বলে উল্লেখ
-
মঞ্চে নির্ধারিত চেয়ারে না বসে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসলেন তারেক রহমান