বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
মজিবুর রহমান, বীর বিক্রম
গ্রাম কমলাপুর, ইউনিয়ন গুঠিয়া, উজিরপুর, বরিশাল।
বাবা সিরাজউদ্দিন হাওলাদার, মা হাসনা বানু। অবিবাহিত।
খেতাবের সনদ নম্বর ৮১।
শহীদ ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১।
মুক্তিবাহিনীর এস ফোর্সের অধিনায়ক একদল পাকিস্তানি সেনাকে নির্দেশ দিলেন আত্মসমর্পণের। তারা অস্ত্রসহ হাত উঁচু করল। কিন্তু আসলে সেটা ছিল তাদের অভিনয়। মিনিটও যায়নি, তারা হঠাত্ মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করল। পাকিস্তানি সেনারা যে এমনটা করবে, মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমানসহ তাঁর সহযোদ্ধাদের ধারণারও অতীত ছিল। তাত্ক্ষণিকভাবে কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়লেও দ্রুত তাঁরাও পাল্টা আক্রমণ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পূর্ব দিকে শাহবাজপুরের পাশেই চান্দুরা। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিবাহিনীর এস ফোর্সের একাদশ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সীমান্ত এলাকা থেকে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভোরে সেখানে পৌঁছায়। বিকেলে তাদের সঙ্গে যোগ দেন এস ফোর্সের অধিনায়ক মেজর কে এম সফিউল্লাহ (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম প্রধান)। মুক্তিবাহিনীর একটি দল (সি কোম্পানি) যখন ইসলামপুরে পৌঁছায়, তখন পেছন থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে হাজির হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুটি মিলিটারি লরি। লরিতে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের ১৪-১৫ জন সেনা। এ সময় কে এম সফিউল্লাহও সেখানে ছিলেন। তাত্ক্ষণিকভাবে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের আদেশ দেন তিনি। তারা অস্ত্রসহ হাত উঁচু করে লরি থেকে লাফ দিয়ে নেমে হঠাত্ মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। কয়েক মিনিট পর পেছন থেকে পাকিস্তানি সেনাভর্তি আরেকটি বাস সেখানে আসে। এরপর শুরু হয় প্রচণ্ড যুদ্ধ।
পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর দলটি কিছুটা বিশৃঙ্খল ও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। মজিবুর রহমান ও তাঁর সহযোদ্ধারা ছিলেন এক কোম্পানি। তাঁদের একটি প্লাটুন জীবন বাঁচাতে পাশের নদীর ওপাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। বাকি দুই প্লাটুনের একটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। একটি প্লাটুন পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করতে থাকে। এই প্লাটুনেই ছিলেন মজিবুর রহমান। এ সময় কয়েকটি গুলি হঠাত্ এসে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগে। সেদিন মুক্তিবাহিনীর মজিবুর রহমানসহ আরেকজন শহীদ এবং ক্যাপ্টেন এ এস এম নাসিম (বীর বিক্রম, পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও সেনাপ্রধান), লেফটেন্যান্ট মঈনুল হোসেনসহ (একাদশ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেডিকেল অফিসার) ১১-১২ জন আহত হন। অন্যদিকে পাকিস্তানি সেনাদের ২৫ জন নিহত ও ১৪ জন বন্দী হয়। অন্যরা পালিয়ে যায়। যুদ্ধ শেষে মজিবুর রহমান ও তাঁর আরেক সহযোদ্ধাকে সমাহিত করা হয় চান্দুরা সেতুর পাশে।
মজিবুর রহমান চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ৩ নম্বর সেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন। এস ফোর্স গঠিত হলে তাঁকে একাদশ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
মা খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে তারেক রহমান
-
নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই: তারেক রহমান
-
তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: শফিকুল আলম
-
জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধছে এনসিপি, দাবি আবদুল কাদেরের
-
এমন বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যেই স্বপ্ন দেখেছি: তারেক রহমান