বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
বদরুল আলম, বীর উত্তম
১২১ মিরপুর রোড, ঢাকা।
বাবা খন্দকার মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা, মা হোসনে আরা বেগম।
স্ত্রী নাদেরা আলম। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ৬২।
গভীর রাতে ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের পাহাড়ি এলাকা ডিমাপুর থেকে উড্ডয়ন করল একটি হেলিকপ্টার। সেটি চালাচ্ছেন বদরুল আলম, সুলতান মাহমুদ (বীর উত্তম) ও সাহাবউদ্দিন আহমেদ (বীর উত্তম)। তাঁদের সঙ্গে আছেন আরও দুজন। তাঁরা অপারেটর। হেলিকপ্টারটি ছোট আকৃতির। নাম অ্যালুয়েট। এতে আছে ১৪টি রকেট ও একটি মেশিনগান। তাঁরা যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল অভিমুখে। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বরের ঘটনা এটি।
হেলিকপ্টারটির রাতে ওড়ার ক্ষমতা ছিল না। তার পরও ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা অপারেশনে রওনা হয়েছেন। তাঁদের লক্ষ্য, গোদনাইলের তেলের ডিপো। এই ডিপো থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর স্থল, নৌ ও আকাশযানগুলোর জন্য জ্বালানি সরবরাহ করা হয়। ভারতের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে পাকিস্তানি সেনারা এখানে মজুদ রেখেছিল বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল। মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা অনেক চেষ্টা করেও এই ডিপোর ক্ষতিসাধন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ, এর নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল অনেক শক্তিশালী।
সেদিন পাকিস্তানি সেনাদের শক্তিশালী নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করে সফল হামলা চালান বদরুল আলম ও তাঁর সহযোদ্ধারা। তাঁরা সীমান্ত অতিক্রম করে ইলিয়টগঞ্জ থেকে প্রথমে কুমিল্লা-ঢাকা মহাসড়ক লক্ষ্য করে দাউদকান্দির দিকে অগ্রসর হন। পরে ঢাকার ডেমরার কাছে এসে গোদনাইল তেলের ডিপো লক্ষ্য করে দক্ষিণ দিকে মোড় নেন। পাকিস্তানি সেনারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁরা গোদনাইলের তেলের ট্যাংকারের ওপর বোমা নিক্ষেপ করেন। মুহূর্তের মধ্যে ট্যাংকারগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হয়। আগুনের লেলিহান শিখা উঠে যায় আকাশে। চারদিক আলোকিত হয়ে পড়ে। আশপাশের মানুষ বিস্ফোরণের শব্দে জেগে উঠে অবাক বিস্ময়ে দেখতে থাকে সেই আগুন। গোদনাইল তেলের ডিপোর আগুন জ্বলে পরের দিনও। কয়েক মাইল দূর থেকেও এই আগুন দেখা যায়।
বদরুল আলম পাকিস্তানি বিমানবাহিনীতে ছিলেন। তাঁর পদবি ছিল ফ্লাইং অফিসার। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের সারগোদা বিমানঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। নিজের ইচ্ছায় বদলি হয়ে তিনি ঢাকায় আসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মে মাসের প্রথমার্ধে ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতে যান। প্রথম দিকে তিনি মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরে স্টাফ অফিসার হিসেবে কাজ করেন। মুক্তিবাহিনীর বিমান উইং গঠিত হলে তিনি এতে যোগ দেন। বিমানবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় বৈমানিক ও এয়ারম্যান রিক্রুট ও তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নভেম্বরে প্রত্যক্ষ অপারেশন শুরু করেন। তিনি গোদনাইল ছাড়াও আখাউড়া, সিলেট, নরসিংদীর রায়পুরাসহ কয়েকটি স্থানে বিমান অপারেশন করেন। এসব হামলার বেশির ভাগ তাঁর কমান্ডেই পরিচালিত হয়।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
অভিনেত্রী শমী কায়সার গ্রেপ্তার
-
মার্চ-এপ্রিলে নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি শুরুর চিন্তা বিএনপির
-
চট্টগ্রামে ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে সংঘর্ষ, ফাঁকা গুলি, সাত পুলিশ সদস্য আহত
-
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ
-
প্রাথমিক ভোট গণনার ফল যে কারণে বিভ্রান্তিকর হতে পারে