বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
নূরউদ্দীন আহমেদ, বীর প্রতীক
গ্রাম সাতাইহাল, ইউনিয়ন গজনাইপুর, উপজেলা নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ। বর্তমান ঠিকানা ৪৩৭/৩ পূর্ব গোড়ান, ঢাকা।
বাবা তমিজউদ্দীন আহমেদ, মা তাহমিনা বেগম।
স্ত্রী সুলতানা তাইবুন নাহার। তাঁদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ৩৫৩।
শেষ রাত। নূরউদ্দীন আহমেদসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা নিঃশব্দ অবস্থান নিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের ৫০-৬০ গজ দূরে। সময় গড়াতে লাগল। ভোর হচ্ছে। অধিনায়ক তাঁদের আক্রমণ শুরু করার সংকেত দিলেন। নৈঃশব্দ্যকে খান খান করে ভেঙে একযোগে গর্জে উঠল প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। গোলাগুলির শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। ঘণ্টা দুই যুদ্ধ করে বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধাই নিরাপদে পেছনে সরে গেলেন। তাঁদের আকস্মিক আক্রমণে হতাহত হলো বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। এ ঘটনা ঘটে দিলকুশা চা-বাগানে ১৯৭১ সালের মধ্য জুলাইয়ে।
দিলকুশা চা-বাগান মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার অন্তর্গত। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে চার মাইল দূরে। সীমান্তের ওপারে কুকিতলে ছিল মুক্তিবাহিনীর ৪ নম্বর সেক্টরের একটি সাবসেক্টর। এই সাবসেক্টরের গণবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই সীমান্ত অতিক্রম করে হিট অ্যান্ড রান পদ্ধতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাতেন। এরই ধারাবাহিকতায় সেদিন তাঁরা দিলকুশা চা-বাগানে আক্রমণ করেন। সেখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক ঘাঁটি। এই ঘাঁটির মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সীমান্ত এলাকায় নজরদারি করত।
মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দলের সমন্বয়ে এই আক্রমণ পরিচালিত হয়। তাঁরা বিভক্ত ছিলেন তিনটি অ্যাসল্ট পার্টি ও তিনটি কাট অফ পার্টি হিসেবে। অ্যাসল্ট পার্টি বা আক্রমণকারী দলে ছিলেন নূরউদ্দীন আহমেদ। পরিকল্পনামাফিক কুকিতল থেকে রওনা হয়ে রাত দুইটায় তাঁরা লাঠিটিলায় পৌঁছান। সেখান থেকে ভোর পাঁচটার আগেই দিলকুশা চা-বাগানে যান। তাঁরা অবস্থান নেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থেকে ৫০-৬০ গজ দূরে। অ্যাসল্ট পার্টির মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকে আক্রমণ চালান। আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। কয়েকজন নিহত ও অনেকে আহত হয়।
দিলকুশা চা-বাগান দখল করা মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য ছিল না। অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করাই ছিল তাঁদের লক্ষ্য। আক্রমণ করেই মুক্তিযোদ্ধাদের সেখান থেকে সরে পড়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা সরে যেতে পারেননি। নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি হওয়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকক্ষণ মুখোমুখি যুদ্ধ করতে হয়। মুখোমুখি যুদ্ধে নূরউদ্দীন আহমেদ যথেষ্ট বীরত্ব প্রদর্শন করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে মুক্তিবাহিনীরও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
নূরউদ্দীন আহমেদ ১৯৭১ সালে দশম শ্রেণীর ছাত্র। তিনি ভারতে প্রশিক্ষণ নেন। যুদ্ধ করেন ৪ নম্বর সেক্টরের কুকিতল ও জালালপুর সাবসেক্টরের অধীনে। লাঠিটিলা, ছোটলেখা, কানাইঘাটসহ আরও কয়েকটি স্থানের যুদ্ধে তিনি অংশ নেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
ইজারার পুরো টাকা না দিয়েই গাবতলী পশুর হাট দখল, হাসিল আদায় ডিপজলের
-
সুন্দরবনের আগুন এখনো জ্বলছে, কারণ খুঁজতে কমিটি
-
গ্যাস উৎপাদন: কূপ খননে আরও চড়া দাম চায় গাজপ্রম
-
নতুন করে আরও যেসব দেশে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ছড়িয়েছে
-
কোহলির আচরণে ‘বিরক্ত’ গাভাস্কার দিলেন পাল্টা জবাব