বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
দেলোয়ার হোসেন, বীর প্রতীক
গ্রাম নিলাখাদ, উপজেলা আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
বাবা আবদুল হাই, মা রোকেয়া বেগম। স্ত্রী শাহানা বেগম। তাঁদের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ১৪৬।
মৃত্যু ডিসেম্বর ২০১০।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান বেশ সুবিধাজনক স্থানে। বিপজ্জনক জেনেও মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে আক্রমণ চালালেন। প্রচণ্ড যুদ্ধ চলতে থাকল। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলে আছেন দেলোয়ার হোসেন। সাহসের সঙ্গে আক্রমণ চালিয়েও তাঁরা ব্যর্থ হলেন। পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে শহীদ ও আহত হলেন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা। এ ঘটনা ঘটে চন্দ্রপুরে ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর।
চন্দ্রপুর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্গত কসবা রেলস্টেশন থেকে তিন মাইল উত্তরে। এই যুদ্ধের বিবরণ আছে মেজর আইন উদ্দিনের (বীর প্রতীক, পরে মেজর জেনারেল) লেখায়।
আইন উদ্দিন লিখেছেন: ‘১৮ নভেম্বর তারিখে ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার [জেনারেল] তুলে আমাকে বলেন যে তাঁরা যৌথভাবে চন্দ্রপুর লাটুমুড়া হিল আক্রমণ করবেন। সেখানে পাকিস্তানি সেনারা অবস্থান করছিল।
‘তিনি [ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তুলে] পরিকল্পনা করলেন, কিন্তু সে পরিকল্পনা আমার মনঃপূত হলো না। কারণ, চন্দ্রপুর গ্রামের সঙ্গেই ছিল লাটুমুড়া হিল [পাহাড়]। চন্দ্রপুর আক্রমণ করলে লাটুমুড়া হিল থেকে পাকিস্তানি সেনারা আমাদের অতি সহজেই ঘায়েল করতে পারবে।
‘আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে হলো। বাংলাদেশ বাহিনীর কোম্পানি পরিচালনা করেন লেফটেন্যান্ট খন্দকার আবদুল আজিজ [বীর বিক্রম, প্রকৃত নাম খন্দকার আজিজুল ইসলাম]। পরিকল্পনা মোতাবেক বাংলাদেশ বাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী যৌথভাবে আক্রমণ করে।
‘এই আক্রমণে বাংলাদেশ ও ভারতীয় বাহিনীর সৈন্যরাই শহীদ হন বেশি। ভারতীয় বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার শিখ মেজর ও তিনজন জুনিয়র কমিশন অফিসারসহ ৪৫ জন এবং মুক্তিবাহিনীর শহীদ হন ২২ জন। আমাদের কোম্পানি কমান্ডারও শহীদ হন। ২২ তারিখ রাতে চন্দ্রপুর আক্রমণ করলে সারা রাত যুদ্ধ হয় এবং পাকিস্তানি বাহিনী শেষ পর্যায়ে পেছনের দিকে চলে যায়। আমাদের যৌথ বাহিনী যুদ্ধ করে চন্দ্রপুর দখল করে নেয়, কিন্তু পুনরায় পাকিস্তানি বাহিনী চন্দ্রপুর দখল করে।’
চন্দ্রপুরে দেলোয়ার হোসেন সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। তাঁর চোখের সামনে শহীদ হন কয়েকজন সহযোদ্ধা। তিনি নিজেও যুদ্ধের একপর্যায়ে আহত হন। আহত অবস্থায়ও যুদ্ধ চালিয়ে যান। একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। সহযোদ্ধারা তাঁকে ফিল্ড হাসপাতালে পাঠান।
দেলোয়ার হোসেন চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন কুমিল্লা সেনানিবাসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের গঙ্গাসাগর সাবসেক্টরে। পরে তাঁকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চন্দ্রপুর যুদ্ধের কয়েক দিন আগে কালাছড়া চা-বাগান আক্রমণেও তিনি অংশ নিয়ে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
তাপপ্রবাহ আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে: জাতিসংঘের প্রতিবেদন
-
যে কারণে চিনি চোরাচালান বেড়েছে
-
এমএলএসে ২৫টি ক্লাবের স্কোয়াডের চেয়ে বেশি মেসির বেতন
-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে ঢুকতে হবে কার্ড পাঞ্চ করে: উপাচার্য
-
পাশের বাড়িতেই ২৬ বছর কাটল নিখোঁজ ব্যক্তির