বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

দুদু মিয়া, বীর প্রতীক

  • গ্রাম দক্ষিণ গোবিন্দারখীল, সদর, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

  • বাবা বদিউর রহমান, মা রহমানা খাতুন। স্ত্রী ছামিরা শবেমেহেরাজ বেগম। তাঁদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ২২৮।

  • মৃত্যু ২০০০।

দুদু মিয়া

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে আক্রমণ করেছে। প্রচণ্ড সেই আক্রমণ। বিপুল সেনা ও সমরাস্ত্র নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ল মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর। এই আক্রমণ আকস্মিক, তবে অপ্রত্যাশিত নয়। মুক্তিযোদ্ধারা আগে থেকেই সতর্ক ছিলেন। তাঁরা সাহসের সঙ্গে আক্রমণ প্রতিরোধ করতে থাকলেন। শুরু হয়ে গেল ভয়াবহ যুদ্ধ।

পাকিস্তানি সেনা, যারা আক্রমণে অংশ নিয়েছে, তারা বেশ দুঃসাহসী। মুক্তিযোদ্ধাদের সব প্রতিরোধ উপেক্ষা করে তারা সামনে এগোতে থাকল। কোনো কোনো স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ল। সেটা দেখে পাকিস্তানি সেনারা বেশ উল্লসিত।

মুক্তিযোদ্ধাদের সব অবস্থানেই পাকিস্তানি সেনারা একযোগে আক্রমণ করেছে। একটি অবস্থানে কয়েকজন সহযোদ্ধা নিয়ে আছেন দুদু মিয়া। পাকিস্তানি সেনাদের দুঃসাহসিকতায় তিনি বিচলিত হলেন না। সাহসের সঙ্গে আক্রমণ মোকাবিলা করে পাল্টা আক্রমণ করলেন।

কাভারিং ফায়ারের ছত্রচ্ছায়ায় তাঁদের অবস্থানের দিকে ক্রল করে এগিয়ে আসছিল কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। দুদু মিয়া সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন অগ্রসরমাণ পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। ব্যাপক গোলাগুলিতে হতাহত হলো কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। থেমে গেল ওদের অগ্রযাত্রা। তখন তিনি আক্রমণের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর এলাকা থেকে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হলো।

এ ঘটনা ঘটে ১৯৭১ সালের মে মাসের শেষে ভোমরায়। সাতক্ষীরা জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভোমরা। মার্চ-এপ্রিলের প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে খুলনা-সাতক্ষীরা ও যশোর এলাকার একদল প্রতিরোধযোদ্ধা সমবেত হয়েছিলেন ভোমরায়। তাঁরা বেশির ভাগ ছিলেন ইপিআর সদস্য। আর ছিলেন কিছুসংখ্যক স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের ইপিআর সদস্যরাই প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।

সেদিন ভোমরার যুদ্ধে দুদু মিয়াসহ কয়েকজন যথেষ্ট রণকৌশল ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। এ কারণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই যুদ্ধ চলে ১৪-১৫ ঘণ্টা। শেষে পাকিস্তানি সেনারা নিহত ও আহত সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

দুদু মিয়া চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টরের অধীনে। তাঁর পদবি ছিল নায়েক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের ভোমরা সাবসেক্টরে। অক্টোবর মাসের শেষে এক যুদ্ধে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আট থেকে নয়টি গুলি লাগে। ভারতে তাঁর চিকিত্সা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দুদু মিয়ার পরিবারের লোকজন তাঁর খোঁজ জানতেন না। দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক মাস পর পঙ্গু অবস্থায় তিনি বাড়ি ফেরেন। ১৯৭২ সালে পঙ্গু দুদু মিয়াকে বিডিআর থেকে অবসর দেওয়া হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান