বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম
গ্রাম নাটেশ্বর, উপজেলা বিয়ানীবাজার, জেলা সিলেট।
বাবা শাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী, মা সুফিয়া চৌধুরী।
স্ত্রী আসমা চৌধুরী। তাঁদের দুই মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ১৬৪।
১৯৭১ সালে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী মেহেরপুর মহকুমার (বর্তমানে জেলা) মহকুমা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মার্চে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ২১-২৩ মার্চ তিনি ঝিনাইদহে কয়েকজন বাঙালি সহকর্মীর (বেসামরিক কর্মকর্তা) সঙ্গে মিলিত হন। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেন যদি সামরিক সংঘর্ষ অবধারিত হয়, তবে তাঁরা নিজ নিজ এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।
২৫ মার্চ রাতেই তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জনগণের সঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। ২৬ মার্চ তিনি দুটি চিঠি লিখে পাঠান ভারতে। একটি মেহেরপুর সীমান্তসংলগ্ন নদীয়া জেলার ডিসিকে। এর অনুলিপি দেন বিএসএফের স্থানীয় অধিনায়ককে (সিও)। দ্বিতীয় চিঠি ভারতের জনগণকে উদ্দেশ করে। দুটি চিঠিতেই ছিল তাঁর স্বাক্ষর ও সরকারি সিলমোহর। দ্বিতীয় চিঠিটি ২৭ মার্চ অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
এদিকে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর চিঠি পেয়ে নদীয়া জেলার ডিসি ও বিএসএফের অধিনায়ক (কর্নেল চক্রবর্তী) সাড়া দেন। তাঁদের আমন্ত্রণে ২৯ মার্চ তিনি ভারতের বেতাই বিওপিতে যান। তাঁরা বাংলাদেশের দূতকে সাদর অভ্যর্থনা জানান। বিএসএফের একটি ছোট দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর তাঁরা আলোচনা করেন।
পরদিন ৩০ মার্চ তিনি চুয়াডাঙ্গা যান। চুয়াডাঙ্গা ইপিআর উইংয়ের বাঙালি সৈনিকদের বিদ্রোহের খবর তিনি আগেই পেয়েছিলেন। এখানে অবস্থানকালে আওয়ামী লীগের নেতা তাজউদ্দীন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তাঁদের তিনি ও ঝিনাইদহ মহকুমার পুলিশ প্রশাসক (এসডিপিও) মাহবুবউদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চ্যাংখালী চেকপোস্টে নিয়ে যান।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী প্রতিরোধযুদ্ধকালে সক্রিয় যুদ্ধের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের নানা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। ৩০ মার্চ মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর সার্বিক নেতৃত্বে প্রতিরোধযোদ্ধারা কুষ্টিয়া আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে এবং ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
পরে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম শুরু হলে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি সশস্ত্র যুদ্ধেই আগ্রহ প্রকাশ করেন। ৮ নম্বর সেক্টরের শিকারপুর সাবসেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। পরে বেনাপোল সাবসেক্টরের অধিনায়ক হন। ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের কাঁঠালবাগান ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশের ভেতরে এসে পুটখালীতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করেন। সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
দুবাইয়ে বিশ্বের ধনকুবেরদের গোপন সম্পদের পাহাড়, কার কত
-
তাপপ্রবাহ ফিরে এসেছে, আজ বিস্তার হতে পারে
-
দুবাইয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জারদারি ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের বিপুল সম্পদ
-
জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চার্লি চ্যাপলিনকেও হত্যা করতে চেয়েছিলেন খুনিরা
-
বৃষ্টির সঙ্গে পড়া শিলায় দূষণের নানা উপাদান