বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
তাহের আলী, বীর বিক্রম
গ্রাম কিসমত মাইজভাগ, ইউনিয়ন ফুলবাড়ী, গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
বাবা শেখ মো. আবরু মিয়া, মা আছমা খাতুন।
স্ত্রী সৈয়দা পেয়ারা বেগম। তাঁদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ৫৪।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে বুড়িঘাটের যুদ্ধের (১৮ এপ্রিল) পর তাহের আলীসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নিলেন মহালছড়িতে। ২৫ এপ্রিল তাঁরা খবর পেলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল তাঁদের আক্রমণ করার জন্য এগিয়ে আসছে। এখন শত্রুদের শক্তি ও অবস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা প্রয়োজন। কিন্তু সে তথ্য জানার জন্য কেউ যেতে রাজি হচ্ছেন না। শেষে এ দায়িত্ব পড়ল তাহের আলীর ওপর। অধিনায়কের নির্দেশে কয়েকজন সহযোদ্ধা নিয়ে ২৬ এপ্রিল ভোরে তিনি রওনা হলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যেদিক থেকে আসছে, সেদিকে। তাঁদের সবার বেশভূষা রাখালের মতো। অস্ত্রগুলো লুকানো। কিন্তু বেশি দূর তাঁরা যেতে পারলেন না। এলাকাটি মিজো-অধ্যুষিত। মিজোরা তাঁদের সহযোগিতা করছে না। এ অবস্থায় সহযোদ্ধারা আর চেষ্টা করতে রাজি নন। এদিকে তাহের আলী নাছোড়বান্দা। তথ্য সংগ্রহ না করে তিনি ফিরবেন না। এ সময় তিনি কৌশলে সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঢুকে পড়লেন মিজো এলাকার মধ্যে। চলে গেলেন একদম পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানের কাছাকাছি। কাজটা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
পাকিস্তানি সেনা ও মিজোদের ফাঁকি দিয়ে তাহের আলী ও তাঁর সহযোদ্ধারা নিরাপদেই রেকি করতে সক্ষম হলেন। তাঁরা দেখতে পেলেন, পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে বিদ্রোহী মিজোরাও যোগ দিয়েছে। মিজোদের সবাই সশস্ত্র। তারাও সংখ্যায় অনেক। পাকিস্তানি সেনারা মিজোদের বশ করে তাদের দলে ভিড়িয়েছে। প্রকাশ্যে পাকিস্তানি সেনা তো আছেই, মিজোদের সঙ্গেও মিশে আছে বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা। তাদের সবাই কমান্ডো ব্যাটালিয়নের। ফেরার পথে এক জায়গায় সশস্ত্র মিজোদের মুখোমুখি হলেন তাঁরা। তখন বেধে গেল যুদ্ধ। কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর মিজোরা পালিয়ে গেল। ফলে তাঁদের বেশ দেরিই হয়ে গেল। এদিকে তাঁরা সময়মতো ফিরতে না পারায় এবং গোলাগুলির শব্দ শুনে ক্যাম্পে থাকা সহযোদ্ধারা মনে করলেন, তাঁদের সবাই শহীদ হয়েছেন। এ রকম ঘটনা পরে আরও কয়েকবার ঘটে। ক্যাম্পে ফেরার পর তাঁদের দেখে সবাই উত্ফুল্ল হয়ে জড়িয়ে ধরলেন। তাহের আলী রেকি করে যা জেনেছেন, তা অধিনায়ককে জানালেন। পরদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁদের অবস্থানে আক্রমণ করে। তখন মহালছড়িতে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে তাঁরা পশ্চাদপসরণে বাধ্য হন।
তাহের আলী চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে তাঁদের রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল চট্টগ্রামে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এতে যোগ দেন। কালুরঘাটে যুদ্ধের পর তাঁরা অবস্থান নেন বুড়িঘাটে। এরপর মহালছড়ি এলাকায়। মহালছড়ির পতন হলে তাঁরা চলে যান ভারতে। সেখানে পুনর্গঠিত হওয়ার পর তিনি শেরপুর জেলার নকশি বিওপি, বৃহত্তর সিলেটের চিকনাগুল, বড়টিলাসহ কয়েকটি জায়গায় যুদ্ধ করেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
শোভাযাত্রায় অংশ নিতে নয়াপল্টনে বিএনপির বিপুল নেতা-কর্মী
-
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন মাথায় গুলিবিদ্ধ শিশু মুসা তাকাচ্ছে, হাত-পা কিছুটা নাড়াচ্ছে
-
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এলএনজি ব্যবসায় চক্র, নেপথ্যে নসরুল হামিদ
-
‘গর্ভপাতের অধিকার’ নিয়ে সোচ্চার হয়েও কমলা হ্যারিস কেন নারীদের ভোট হারালেন
-
তিন মাসে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার শুল্ক–কর ফাঁকি উদ্ঘাটন