বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
জুম্মা মিয়া, বীর বিক্রম
গ্রাম হেতিমগঞ্জ, উপজেলা গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
বাবা ওসমান আলী, মা সরিফা খাতুন। তাঁর এক ছেলে ও চার মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ৯৭।
শহীদ এপ্রিল ১৯৭১।
কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত বিবিরবাজার, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। কুমিল্লা-বিবিরবাজার সড়কের উত্তরে প্রায় সমান্তরাল বহমান গোমতী নদী। নদীটি বিবিরবাজারের কাছে দক্ষিণে বাঁক নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। নদীর বাঁক ঘেঁষেই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষাব্যূহ।
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিবিরবাজারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি সেনারা অতর্কিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে আক্রমণ করে। ৩৯ বালুচ রেজিমেন্ট, গোলন্দাজ ও ট্যাংক বাহিনীর সমন্বয়ে প্রচণ্ড আক্রমণ। তারা প্রথমে পশ্চিম দিকে অবস্থান নিয়ে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে সেই আক্রমণ প্রতিহত করে দেন। তাঁদের পাল্টা আক্রমণে হতাহত হয় বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা।
এরপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণ করে। প্রচণ্ড আক্রমণের চাপে মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ পিছু হটে যায়। দুটি দল সাহসের সঙ্গে তাদের অবস্থান ধরে রাখে। এই দুটি দলের একটির নেতৃত্বে ছিলেন জুম্মা মিয়া। তিনি সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে বিপুল বিক্রমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধ করেন। তাঁদের বীরত্বে থেমে যায় পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা।
পরের দিনও যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। সেদিন মুক্তিবাহিনীর নতুন একটি দলও বিবিরবাজারে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি ও মনোবল বেড়ে যায়। দুই পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলতে থাকে।
বিবিরবাজার থেকে যখন-তখন কুমিল্লা সেনানিবাস ও বিমানবন্দরে আক্রমণ চালানো সম্ভব। তাই বিবিরবাজার দখলের জন্য পাকিস্তানি সেনারা মরিয়া হয়ে ওঠে। এ জন্য তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করে। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর কাছেও বিবিরবাজার ছিল সমান গুরুত্বপূর্ণ।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানের একাংশের পতন ঘটলেও জুম্মা মিয়া তাঁর দল নিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেন। কোনো কিছুই তাঁকে টলাতে পারল না, বরং তাঁর দলের পাল্টা আক্রমণে নিহত হলো অগ্রসরমাণ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। সেদিন পাকিস্তানি সেনারাও দুর্দমনীয়। একপর্যায়ে ট্যাংকের ছত্রচ্ছায়ায় তারা চলে এল জুম্মা মিয়াদের প্রতিরক্ষা অবস্থানের খুব কাছে। বৃষ্টির মতো গুলি করতে করতে তারা এগোতে থাকল।
জুম্মা মিয়া সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। এ সময় একঝাঁক গুলি ছুটে এল তাঁর দিকে। নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না তিনি। কয়েকটি গুলি বিদ্ধ হলো তাঁর শরীরে। সঙ্গে সঙ্গে ঢলে পড়লেন মাটিতে। শহীদ হলেন তিনি। এর পর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়ে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিবিরবাজার দখল করে নেয়।
জুম্মা মিয়া চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন কুমিল্লা উইংয়ে (বর্তমানে ব্যাটালিয়ন)। তখন তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
খালেদা জিয়ার জন্য জার্মানির প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে কাতার
-
জাতীয় চিড়িয়াখানার খাঁচা থেকে বেরিয়ে গেল সিংহী, দুই ঘণ্টা পরে নিয়ন্ত্রণে
-
চোখের সামনে সঙ্গীদের মেরে আমাদের ভয় দেখাত
-
হাসপাতালে শাশুড়ি খালেদা জিয়াকে দেখে ধানমন্ডিতে বাবার বাড়িতে জুবাইদা রহমান
-
চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করলেই খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে: মির্জা ফখরুল