বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
জামিলউদ্দীন আহসান, বীর প্রতীক
গাবতলী, বগুড়া। বর্তমান ঠিকানা বাড়ি ৪৩৫, সড়ক ৩০, ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা।
বাবা মুহাম্মদ জসিমউদ্দীন, মা হুসন আরা জেসমিন।
স্ত্রী বীথি জামিল। তাঁদের দুই ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ৩৪।
শীতের রাত। ঘন কুয়াশায় ঢাকা প্রান্তর। তখন রমজান মাস। মুক্তিযোদ্ধারা মধ্যরাতে সেহরি খেয়ে বেরিয়ে পড়লেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানের উদ্দেশে। তাঁদের নেতৃত্বে জামিলউদ্দীন আহসান (জামিল ডি আহসান)। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানের কাছাকাছি যাওয়ামাত্র তারা গোলাগুলি শুরু করল। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ করলেন।
এর মধ্যে ভোরের আলো ফুটেছে। জামিলউদ্দীন আহসান ৭ নম্বর প্লাটুন নিয়ে ৮ নম্বর প্লাটুনের সঙ্গে যোগ দিলেন। তাঁদের সঙ্গে থাকা মর্টার, রকেট লঞ্চার দিয়ে সালদা নদীর অন্য পাশে রেলস্টেশন ও নয়নপুর বাজারে আক্রমণ চালালেন। ৮ নম্বর প্লাটুনের মেশিনগান পাকিস্তানি সেনাদের রেলস্টেশনের মেশিনগান পোস্ট অকার্যকর করে দিল। মুক্তিবাহিনীর মর্টার ও আর্টিলারি ‘মুজিব ব্যাটারি’র অবিরাম ও অব্যর্থ শেলিং তাদের তটস্থ করে ফেলল।
ক্রমেই বেলা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ল। তারা অবস্থান ছেড়ে পালাতে শুরু করল। জামিলউদ্দীন আহসান দেখতে পেলেন, আহত ও নিহত সেনাদের নিয়ে শত্রুরা পালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের ধাওয়া করতে পারলেন না। কারণ, মাঝে নদী। তিনি মুক্তিবাহিনীর অন্য দলকে জানালেন পলায়নরত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করার জন্য। সম্মিলিত সাঁড়াশি আক্রমণে দুপুরের মধ্যেই সালদা নদী ও নয়নপুর বাজার এলাকা সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে গেল।
এ ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বরে সালদা নদীতে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত সালদা নদী। ১৯৭১ সালের জুন-জুলাই থেকে এখানে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩০ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট মুখোমুখি শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিল। দুই অবস্থানের মধ্যে ছিল সালদা নদী ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। মুক্তিযুদ্ধকালে এখানে অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
সেদিনকার যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অসংখ্য সদস্য হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পাঁচজন পাকিস্তানি সেনার মৃতদেহ উদ্ধার ও তিনজন রাজাকারকে বন্দী করেন। অনেক অস্ত্র, গোলাবারুদ ও রসদ তাঁরা দখলে নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে এলএমজিম্যান সিরাজ শহীদ এবং একজন আহত হন।
জামিলউদ্দীন আহসান ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মেলাঘরে গিয়ে তাতে যোগ দেন। জুনের শেষে প্রথম বাংলাদেশ ওয়ারকোর্সে অন্তর্ভুক্ত হন। প্রশিক্ষণ শেষে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিয়ে ৩ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এ সময় চুনারুঘাট চা-বাগানের যুদ্ধে অংশ নেন। পরে ২ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও নাজিরহাটে যুদ্ধ করেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
ট্রাম্পের বিজয় বিশ্বে যেসব বদল আনতে পারে
-
বিএনপিসহ ১৭টি দল ও জোট নাম প্রস্তাব করেছে
-
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ
-
মুজিব বর্ষে কত টাকা অপচয়, বের করবে সরকার
-
সংবাদপত্রের ওপর কোনো আক্রমণ সহ্য করব না: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব