বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
গোলাম মোস্তফা খান, বীর বিক্রম
গ্রাম কুটি, উপজেলা কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
বাবা গোলাম পাঞ্জত আলী, মা রাহেলা খাতুন।
স্ত্রী জ্যোত্স্না বেগম। তাঁদের পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ৭২। গেজেটে নাম গোলাম মোস্তফা কামাল। ভুল করে শহীদ দেখানো হয়েছে।
গোলাম মোস্তফারা নিঃশব্দে এফইউপিতে সমবেত হন। এর অদূরেই ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটি। তাঁদের সমন্বিত আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষায় ফাটল ধরে। এরপর পাকিস্তানিরা দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা লাইনের শেলপ্রুফ বাংকারে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা লাইনের বাইরে একটি গাছের ওপর ছিল তাদের সুরক্ষিত গোপন পর্যবেক্ষণ পোস্ট। সেখান থেকে দু-তিনজন পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান সম্পর্কে বাংকারে খবর পাঠায়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানিরা গোলা ছোড়ে। এটা গোলাম মোস্তফা খানসহ মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে বুঝতে পারেননি। তাঁদের এক সহযোদ্ধা সেটি দেখতে পেয়ে তাঁকে জানান।
গোলাম মোস্তফা খানের কাছে ছিল এলএমজি। তিনি এলএমজি নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে পর্যবেক্ষণ পোস্টের কাছে যান এবং আক্রমণ করেন। তাঁর এলএমজির ব্রাশফায়ারে পর্যবেক্ষণ পোস্ট ধ্বংস ও পাকিস্তানি সেনারা নিহত হয়। এর ফলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণের তীব্রতা কমে যায়।
এ ঘটনা ঘটে ১৯৭১ সালের ৩১ জুলাইয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কামালপুরে। এটি জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ছিল। চারপাশে ছিল বাংকার। কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা ছিল ঘাঁটি। বিছানো ছিল অসংখ্য মাইন ও বুবি ট্র্যাপ। এ ছাড়া কয়েকটি গাছের ওপর ছিল তাদের পর্যবেক্ষণ পোস্ট।
সেদিন যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুর্ভেদ্য প্রতিবন্ধকতা সাহসের সঙ্গে পার হয়ে মূল প্রতিরক্ষায় ঢুকে যান। গোলাম মোস্তফা খানের অনেক সহযোদ্ধা মাইন ও গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এর পরও তাঁরা থেমে যাননি। দেশমাতৃকার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় প্রতিশোধের নেশায় এগিয়ে যান। অবশ্য বিজয়ী হতে পারেননি। হেরে গিয়েও দেশমাতৃকার ভালোবাসায় জয়ী হন তাঁরা।
গোলাম মোস্তফা খান চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে। কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানে। ১৯৭০ সালের শেষ থেকে ছুটিতে ছিলেন। মার্চ মাসের মাঝামাঝি ছুটি শেষে পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য ঢাকা সেনানিবাসের ট্রানজিট ক্যাম্পে ছিলেন।
২৫ মার্চের পর আটক করা হয় তাঁকে। কিছুদিন পর পাকিস্তানি সেনা কর্তৃপক্ষ তাঁকেসহ আটক আরও অনেক বাঙালি সেনাকে ট্রেনযোগে রংপুর সেনানিবাসে পাঠায়। পথিমধ্যে এক স্টেশনে ট্রেন যাত্রাবিরতি করলে তিনিসহ কয়েকজন প্রহরারত পাকিস্তানি সেনাদের ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যান। পরে জামালপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সে অন্তর্ভুক্ত হন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন: ৬৫ শতাংশ হতে যাচ্ছে লিখিত, ৩৫ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক
-
গেটস ফাউন্ডেশন থেকে বিদায় নিচ্ছেন মেলিন্ডা গেটস
-
কেন অর্থনীতিবিদকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করলেন পুতিন
-
ঢাকা অঞ্চলের হোটেল-রেস্তোরাঁয় মূল্যছাড় পাবেন পুলিশ সদস্যরা
-
ছেলেকে কখন বুকে জড়িয়ে নেবেন, সেই অপেক্ষায় মা