বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
গিয়াসউদ্দিন, বীর প্রতীক
৩৬/১ তল্লা রোড, তল্লা, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ।
বাবা সামসুদ্দীন আহমেদ, মা আম্বিয়া খাতুন। স্ত্রী খুরশিদা বেগম। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে।
খেতাবের সনদ নম্বর ৩০৭।
মৃত্যু ২০০৪।
২৬ অক্টোবর ১৯৭১। গিয়াসউদ্দিন খবর পান তাঁদের অবস্থানস্থলের দিকে নদীপথে এগিয়ে আসছে একটি পাকিস্তানি গানবোট। তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ এলাকায় যুদ্ধরত মুক্তিবাহিনীর একটি গেরিলাদলের দলনেতা। তাঁদের অবস্থান ছিল মেঘনা-শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনার কলাগাছিয়ায়।
মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গানবোট কখনো দিনে, কখনো রাতে ওই এলাকায় টহল দিত। গিয়াসউদ্দিন সহযোদ্ধাদের নিয়ে এর আগেও পাকিস্তানি গানবোটে আক্রমণ করার চেষ্টা করেন। কয়েকবার প্রস্তুতি নিয়ে নদীর তীরে অপেক্ষা করেছেন। ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যার পরও তিনি খাবার-দাবার সেরে সহযোদ্ধাদের নিয়ে সারা রাত নদীর তীরে অপেক্ষা করেন। কিন্তু গানবোট আসেনি।
গিয়াসউদ্দিনসহ পরিশ্রান্ত মুক্তিযোদ্ধারা তখন শিবিরে বিশ্রামরত। তাঁদের মধ্যে তিনিসহ ৩০ জন দ্রুত তৈরি হয়ে আরআর (রিকোয়েললেস রাইফেল) গানসহ পুনরায় অবস্থান নেন নদীর তীরের সুবিধাজনক স্থানে। কিছুক্ষণের মধ্যেই গানবোটটি তাঁদের অস্ত্রের আওতার মধ্যে চলে আসে। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে তাঁদের আরআর গানসহ অন্যান্য সব অস্ত্র।
গিয়াসউদ্দিন তিনজন সহযোদ্ধার সহযোগিতায় নিখুঁত নিশানায় গানবোট লক্ষ্য করে তিনটি আরআর গোলা নিক্ষেপ করেন। তাতে গানবোটটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে একদিকে হেলে পড়ে। ডেকে থাকা পাকিস্তানি সেনারা ছোটাছুটি শুরু করে। এ সময় তাঁর দুঃসাহসী কয়েকজন সহযোদ্ধা এগিয়ে গিয়ে নিজ নিজ অস্ত্র দিয়ে গুলি করেন। তাঁদের গুলিতে নিহত হয় দুজন পাকিস্তানি সেনা।
এরপর গিয়াসউদ্দিন আরআর গানের আরও কয়েকটি গোলা ছুড়ে গানবোটটি পুরোপুরি ধ্বংসের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু তাঁর সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি। তুমুল গোলাগুলির শব্দ শুনে মুন্সিগঞ্জ টার্মিনাল থেকে সেখানে আরেকটি গানবোট দ্রুত চলে আসে। ওই গানবোট নদীতে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিয়ে তাঁদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি শুরু করে।
গিয়াসউদ্দিন ১৯৭১ সালে পড়াশোনার পাশাপাশি পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গেও ছিলেন যুক্ত। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। পরে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন। উল্লেখযোগ্য সিদ্দিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন অপারেশন (১০ আগস্ট), লাঙ্গলবন্দের সেতু অপারেশন (আগস্টের মাঝামাঝি), ফতুল্লায় আক্রমণ।
নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার অন্তর্গত লাঙ্গলবন্দের সেতু। মুক্তিযুদ্ধকালে চারজন পাকিস্তানি ও দুজন বাঙালি ইপিআর ওই সেতুতে পাহারা দিতেন। দুই ইপিআর তাঁদের সহযোগিতা করেন। গভীর রাতে গিয়াসউদ্দিন ২২ জন সহযোদ্ধা নিয়ে সেখানে আক্রমণ করেন। পাকিস্তানিরা পাল্টা প্রতিরোধের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। চারজনই নিহত হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা বিস্ফোরক দিয়ে সেতু ধ্বংস করেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
৪১ বছরেও বিচার শেষ হয়নি
-
আসিফ নজরুলের সঙ্গে ‘অশোভন আচরণে’ তারেক রহমানের নিন্দা
-
নয়াপল্টন থেকে শোভাযাত্রা শুরু করেছে বিএনপি
-
সাগর শান্ত, চার মাস পর সৈকতে উড়ছে লাল-হলুদ নিশানা
-
ট্রাম্পের জয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার ঘোষণা দিলেন ইলন মাস্কের মেয়ে