বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
কুদ্দুস মোল্লা, বীর প্রতীক
গ্রাম কাইতমারা, উপজেলা মুলাদী, বরিশাল।
বাবা ফজলে আলী, মা আমেনা বেগম। বিবাহিত। নিঃসন্তান।
খেতাবের সনদ নম্বর ৩৮৪।
মৃত্যু ১৯৯২।
কুদ্দুস মোল্লা (সোনামদ্দীন) ১৯৭১ সালের আগে পেশায় ডাকাত ছিলেন। এ অপরাধে তিনি দু-তিনবার ধরা পড়েন এবং জেলও খাটেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ডাকাতি ছেড়ে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন।
২৫ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিভিন্ন দিক থেকে বরিশালে আক্রমণ করে। কামানের গর্জন, গানবোটের শেলিং আর মর্টারের শব্দে চারদিক কেঁপে ওঠে। তখন কুদ্দুস মোল্লা তাঁর দলবলসহ নিজ এলাকায় ছিলেন। তিনি খবর পান, পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল মাদারীপুর থেকে গৌরনদী হয়ে বরিশালের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ছাত্র-যুবকদের সমন্বয়ে স্থানীয় প্রতিরোধযোদ্ধারা গৌরনদীর উত্তরে কটকস্থলে প্রতিরক্ষা অবস্থান নিয়েছেন। তিনি দলবলসহ তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।
দুপুরে সেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি বড় দল উপস্থিত হয়। এ সময় দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি গুলির ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে কুদ্দুস মোল্লার দল ও স্থানীয় প্রতিরোধযোদ্ধারা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পাকিস্তানি সেনাদের হাতে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রতিরোধযোদ্ধা শহীদ হন।
এরপর কুদ্দুস মোল্লা উপলব্ধি করেন, প্রশিক্ষণ ছাড়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সম্ভব নয়। তিনি তাঁর দলবল নিয়ে ভারতে যান। আর ডাকাতি করবেন না অঙ্গীকার করার পর তাঁকে এবং তাঁর দলবলকে মুক্তিবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি জুলাই মাসে দেশে ফেরেন।
কুদ্দুস মোল্লা পরে ৯ নম্বর সেক্টরের টাকি সাবসেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন। সেপ্টেম্বর মাস থেকে তিনি ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমরের (বীর উত্তম, পরে মেজর) অধীনে ছিলেন। হিজলা, মুলাদী, মেহেন্দীগঞ্জ, বাবুগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এর মধ্যে মুলাদী থানার ছবিপুরের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।
একদিন আড়িয়াল খাঁ নদ দিয়ে দুটি ফ্ল্যাট জাহাজে করে পাকিস্তানি সেনাদের অনুগত কয়েকজন বাঙালি পুলিশ কোথাও যাচ্ছিল। কুদ্দুস মোল্লা স্থানীয় জনগণের সহায়তায় তাঁর দলবল নিয়ে নদীর সুবিধাজনক এক স্থানে ওই ফ্ল্যাট জাহাজে ঝটিকা আক্রমণ করেন। তখন দুই পক্ষে বেশ কিছুক্ষণ পাল্টাপাল্টি গুলির ঘটনা ঘটে। শেষে শত্রুপক্ষ তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং ১১টি অস্ত্র তাঁর হস্তগত হয়।
পরে কুদ্দুস মোল্লা বাবুগঞ্জ থানা আক্রমণ করেন। থানায় কিছু পাকিস্তানি সেনা ছিল। ফলে তিনি তেমন সুবিধা করতে পারেননি। পাল্টা আক্রমণে তিনি পিছু হটে যান।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
আমরা সামনে তাকাতে চাই, পেছনে নয়: ডোনাল্ড লু
-
জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বাড়িতে এসে নাবিক তারেকুল বললেন, ‘দিনগুলো ভুলে যেতে চাই’
-
স্ত্রীর পক্ষে ভোট চাওয়ায় যুবদল নেতাকে বহিষ্কার
-
ঢাকা শহরে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে না: সড়ক পরিবহনমন্ত্রী
-
নাকবা দিবস: আরও বড় মহাবিপর্যয়ের মুখোমুখি ফিলিস্তিনিরা