বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা
কাজী মুহাম্মদ সফিউল্লাহ, বীর উত্তম
গ্রাম রূপগঞ্জ (কাজীবাড়ি), উপজেলা রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। বর্তমান ঠিকানা ঢাকা।
বাবা কাজী মোহাম্মদ আবদুল হামিদ, মা রজ্জব বানু।
স্ত্রী সাইদা আক্তার। তাঁদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে।
খেতাবের সনদ নম্বর ০২।
১৯৭১ সালে কাজী মুহাম্মদ সফিউল্লাহ (কে এম সফিউল্লাহ) পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। এর অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। ২৮ মার্চ তিনি বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টর এবং পরে এস ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চান্দুরায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক যুদ্ধে তিনি অল্পের জন্য বেঁচে যান। ষোলোই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) উপস্থিত ছিলেন। তাঁর নিজের বয়ানে (১৯৭৫) মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঘটনা জানা যাক:
‘২৭ মার্চ বিকেলের দিকে আমাদের একজন ড্রাইভার ঢাকা থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়।...সন্ধ্যার দিকে আরও কিছু লোক ঢাকা থেকে আসে। তাঁদের মুখে শুনতে পাই ঢাকাতে বেশ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এর আগে ড্রাইভার ছাড়া আর কারও কাছে কিছু শুনতে পাইনি।
‘২৮ মার্চ ১০টার সময় উদ্বৃত্ত অস্ত্রশস্ত্র ও যানবাহন নিয়ে আমি ময়মনসিংহ অভিমুখে যাত্রা করি। জয়দেবপুর থেকে বের হওয়ার পর সকল গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উড্ডয়ন করি। সাথে সাথে সমস্ত জোয়ানের মাঝে এক অভূতপূর্ব আনন্দের সৃষ্টি হয়। আমার কনভয় জয়দেবপুর থেকে বের হবার সাথে সাথে জনতা উল্লাসে ফেটে পড়ে এবং “জয় বাংলা” স্লোগান দিয়ে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে।
‘টাঙ্গাইলে জনতার উত্সাহ ও উদ্দীপনা দেখে আমি খুবই অনুপ্রাণিত হই। ভাবনাও কম ছিল না। মনে মনে চিন্তা করতে থাকি, আমি যা করতে চলেছি সে কাজে আমি শুধু একা, না আরও কেউ আছে? কারণ আমি জানি, আমি যা করতে চলেছি তা যদি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, তাহলে মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র সাজা। অন্যদিকে জনতার উত্ফুল্লতা দেখে মনে উত্সাহের সৃষ্টি হতো।
‘২৯ মার্চ বিকেলে জেলা (ময়মনসিংহ) অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সমস্ত অফিসার, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত এমএনএ ও এমপিএদেরকে নিয়ে এক বৈঠক করা হয়। সেই বৈঠকে কীভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করতে হবে তার পরিকল্পনা নিই।
‘৩০ মার্চ ময়মনসিংহ থেকে ট্রেনযোগে নরসিংদী রওনা দিই। আসার পূর্বে আমি জনগণকে আশ্বাস দিলাম যে, আমি আমার ব্যাটালিয়ন নিয়ে শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে যাচ্ছি। আমার হেডকোয়ার্টার্স স্থাপন করি কিশোরগঞ্জ। আর আমার লোকজন বিভিন্ন গন্তব্যে অগ্রসর হয়।’
কাজী মুহাম্মদ সফিউল্লাহ আর পেছনে তাকাননি। ৩ নম্বর সেক্টর এলাকায় তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরিচালনায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য যুদ্ধে অংশ নেন। তাঁর সার্বিক নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি সরাসরি যুদ্ধও সংঘটিত হয়।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Also Read
-
উপদেষ্টা সেখ বশির বাণিজ্যে, ফারুকী সংস্কৃতিতে, স্থানীয় সরকারে এলেন সজীব ভূঁইয়া
-
জি এম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা আসামি
-
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঝামেলা এড়াতে মোদি-ট্রাম্প ঘনিষ্ঠতার দিকে তাকিয়ে ভারত
-
ফার্গুসনের হ্যাটট্রিক, হেইর বিশ্ব রেকর্ড, শেষ ওভারে ফিলিপসের ৩ উইকেট—নিউজিল্যান্ডের নাটকীয় জয়
-
প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্যের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন