বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তদের তালিকা

কাজী আকমল আলী, বীর প্রতীক

  • গ্রাম যশাতুয়া, ইউনিয়ন রতনপুর, উপজেলা নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বর্তমান ঠিকানা সাতগড়া, রংপুর।

  • বাবা আকামত আলী, মা মরিয়ম খাতুন।

  • স্ত্রী খোদেজা বেগম। তাঁদের পাঁচ ছেলে।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ৮১।

কাজী আকমল আলী

মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিতে আক্রমণ চালালেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে। তাঁদের নেতৃত্বে কাজী আকমল আলী। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি সহযোগী কয়েকজন। প্রচণ্ড আক্রমণে দিশাহারা পাকিস্তানি সেনারা। কয়েক ঘণ্টার প্রচণ্ড যুদ্ধে নিহত হলো বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। তারা পালাবার পথ খুঁজে ব্যর্থ হয়ে আত্মসমর্পণ করল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। এ ঘটনা ঘটে নরসিংদী জেলার মনোহরদীতে, ১৯৭১ সালের ২০ বা ২১ অক্টোবর।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়োজিত ছিল কয়েকজন বাঙালি ইপিআর সদস্য। আক্রমণের আগে মুক্তিযোদ্ধারা গোপনে হাত করেন ওই ইপিআর সদস্যদের। বাঙালি ইপিআররা প্রতিশ্রুতি দেন মুক্তিযোদ্ধারা যখন আক্রমণ চালাবেন, তখন তাঁদের পক্ষে থাকার। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা কাজী আকমল আলীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প অবরোধ করেন। যুদ্ধ শুরু হলে বাঙালি ইপিআর সদস্যরা পক্ষ ত্যাগ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন। বাঙালি ইপিআররা পক্ষ ত্যাগ করায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান দুর্বল হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা ও পক্ষত্যাগী ইপিআর সদস্যদের সম্মিলিত আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে।

কয়েক ঘণ্টা ধরে সেখানে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৫ জন সেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে ১১ জন। জীবিত পাকিস্তানি সেনাদের মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে পাঠানোর সময় পথিমধ্যে ক্রুদ্ধ জনতা কয়েকজনকে পিটিয়ে হত্যা করে। চারজনকে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। মনোহরদীর যুদ্ধে কাজী আকমল আলী যথেষ্ট কৌশলী ও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন।

কাজী আকমল আলী চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে কিছুদিনের জন্য ভারতে আশ্রয় নেন। পরে মুক্তিবাহিনীর ৩ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স থেকে তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল পাঠানো হয় দেশের অভ্যন্তরে। তিনি তাঁর দল নিয়ে নরসিংদী ও এর আশপাশের এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অবস্থানে দুঃসাহসিক কয়েকটি অপারেশন করেন। উপর্যুপরি অ্যামবুশ পরিচালনা করে পাকিস্তানি সেনাদের বিপর্যস্ত করেন। তিনি বেশির ভাগ সময় সহযোদ্ধাদের নিয়ে দেশের অভ্যন্তরেই অবস্থান করতেন। তাঁর অধীনে ছিল প্রায় ১০০ মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা বেশির ভাগ ছিলেন গণবাহিনীর যোদ্ধা।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান